রাজশাহী নগরীর কাদিরগঞ্জে ‘ডক্টর ইংলিশ’ কোচিং সেন্টার থেকে বিপুল অস্ত্র ও বিস্ফোরক তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী। পুরো বাড়িটি ঘিরে রাখা হয়েছে, তবে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
রাজশাহী নগরীতে আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে কাদিরগঞ্জ এলাকা। সাধারণত শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার জায়গা হিসেবে পরিচিত একটি কোচিং সেন্টারেই এবার মিলেছে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও বিস্ফোরক তৈরির সরঞ্জাম। ঘটনাটি শুধু স্থানীয় নয়, বরং জাতীয় পর্যায়েও নিরাপত্তা উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
শুক্রবার গভীর রাতে সেনাবাহিনীর ৪০ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট হঠাৎ করেই অভিযান চালায় কাদিরগঞ্জের একটি বহুতল ভবনে। ভবনটিতে ছিল ‘ডক্টর ইংলিশ’ নামের একটি কোচিং সেন্টার। বাহ্যিকভাবে সেটি সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতোই মনে হলেও, ভেতরে প্রবেশ করতেই মিলল চাঞ্চল্যকর সব সরঞ্জাম। সেনা সদস্যরা পুরো বাড়িটি ঘিরে ফেলে ঘণ্টাব্যাপী তল্লাশি চালায়।
অভিযানের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, কোচিং সেন্টার থেকে দুটি বিদেশি এয়ার গান, একটি রিভলবার, একটি কার্তুজ, তিন বক্স এয়ারগানের শিশা, দেশীয় ধারালো অস্ত্র, ওয়াকিটকি, জিপিএস ডিভাইস, দূরবীন (বাইনোকুলার), মাদকদ্রব্যসহ বিস্ফোরক তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। এসব সরঞ্জাম দেখে প্রথমেই বোঝা যায়, এখানে দীর্ঘদিন ধরে গোপনে অস্ত্র সংগ্রহ ও বিস্ফোরক তৈরির কাজ চলছিল।
যে প্রতিষ্ঠানটিতে অভিযান চালানো হয়েছে, সেটি শিক্ষার্থীদের জন্য ইংরেজি কোচিং সেন্টার হিসেবে পরিচিত ছিল। নামের আড়ালে কিভাবে সেখানে এত বিপজ্জনক সরঞ্জাম ঢুকল এবং এতদিন ধরে অগোচরে রইল, তা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র প্রশ্ন উঠেছে। এলাকাবাসী বলছে, কোচিংয়ের আড়ালে একটি গোপন সংগঠন সক্রিয় ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখা দরকার।
অভিযানে অংশ নেওয়া সেনাবাহিনীর সদস্যরা এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য দেননি। তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পুরো বাড়িটি এখনো সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং অভিযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারও প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র গাজিউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “সেনাবাহিনীর এই অভিযানের বিষয়ে আমরা এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য পাইনি। তবে তারা যখন আমাদের কাছে বিষয়টি হস্তান্তর করবে, তখন বিস্তারিত জানানো সম্ভব হবে।”
এমন ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই ভাবছেন, কোচিং সেন্টারের ভেতরে আসলে কী ধরনের গোপন কার্যক্রম চলছিল। শিশু-কিশোররা যেখানে প্রতিদিন পড়াশোনা করতে যেত, সেখানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-বিস্ফোরক মজুদ থাকার খবর সবাইকে হতভম্ব করে দিয়েছে।
অন্যদিকে, অনেকেই বলছেন, এতদিন ধরে এই কার্যক্রম কীভাবে নজর এড়াল—এ প্রশ্নের উত্তর বের করা জরুরি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মনে করছে, এই ঘটনার সঙ্গে বড় কোনো নেটওয়ার্ক জড়িত থাকতে পারে।
এখন পর্যন্ত সেনাবাহিনী কিছুই নিশ্চিত না করলেও ধারণা করা হচ্ছে, উদ্ধার হওয়া জিনিসপত্র পুলিশের কাছে হস্তান্তরের পরই তদন্ত শুরু হবে। ততক্ষণ পর্যন্ত কাদিরগঞ্জের পুরো এলাকা কড়া নিরাপত্তার মধ্যে রাখা হয়েছে। সাধারণ মানুষকে ওই বাড়ির আশেপাশে ঘোরাঘুরি করতে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে।
রাজশাহীর ইতিহাসে এরকম ঘটনা বিরল। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আড়ালে কীভাবে অস্ত্রের ভাণ্ডার তৈরি হলো, তা উদঘাটন করা এখন নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।