close
ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!
আফ্রিকার মধ্যাঞ্চলের দেশ কঙ্গোতে ভয়াবহ সংঘর্ষে প্রাণহানি বেড়েই চলেছে। কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলে রুয়ান্ডা-সমর্থিত বিদ্রোহীগোষ্ঠী এম২৩-এর সঙ্গে সরকারি বাহিনীর লড়াইয়ে গত পাঁচ দিনে অন্তত ৭০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে প্রায় ২,৮০০ জন। দেশটিতে ক্রমবর্ধমান অস্থিরতার ফলে হাজার হাজার মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।
গোমা শহর দখলে নিল এম২৩ বিদ্রোহীরা
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংঘর্ষের মধ্যেই এম২৩ বিদ্রোহীগোষ্ঠী কঙ্গোর উত্তর কিভু প্রদেশের রাজধানী গোমার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। বর্তমানে তারা দক্ষিণ কিভু প্রদেশের রাজধানী বুকাভুর দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক জানিয়েছেন, সংঘর্ষের ফলে কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলের পরিস্থিতি চরম উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। তিনি আরও জানান, জাতিসংঘ কঙ্গোতে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে, তবে এই ভয়াবহ সংঘর্ষ দেশটির স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
শান্তিরক্ষী বাহিনীর প্রাণহানি
এম২৩ বিদ্রোহীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত সপ্তাহে সংঘর্ষে জাতিসংঘের অন্তত ১৩ জন শান্তিরক্ষী নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
বিদ্রোহী গোষ্ঠী এম২৩-এর ইতিহাস
এম২৩ বা ‘মার্চ ২৩ মুভমেন্ট’ কঙ্গোর তুতসি সম্প্রদায়ের একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী, যা এক সময় কঙ্গোর সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাজ করত। কিন্তু ২০১২ সালে তারা সরকারবিরোধী হয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করে এবং সেনাবাহিনী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর থেকে এম২৩ বিদ্রোহীরা বিভিন্ন সময় কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা দখল করেছে। ২০২২ সাল থেকে তাদের আক্রমণের মাত্রা ব্যাপক হারে বেড়ে যায়।
সংঘর্ষের ভয়াবহতা ও মানবিক বিপর্যয়
বিবিসি জানায়, ২০২৪ সালের শুরু থেকেই কঙ্গো সেনাবাহিনী ও এম২৩ বিদ্রোহীদের মধ্যে তীব্র লড়াই চলছে। জাতিসংঘের তথ্যমতে, চলতি বছর এই সংঘাতের ফলে প্রায় চার লাখ মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংঘাত কেবল কঙ্গোর অভ্যন্তরীণ সংকট নয়, বরং এটি পুরো মধ্য আফ্রিকার স্থিতিশীলতার জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে উঠতে পারে। কঙ্গোর সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চেয়েছে এবং বিদ্রোহীদের দমন করতে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে। তবে বিদ্রোহীদের শক্ত অবস্থানের কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
কঙ্গোতে চলমান সংঘর্ষ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘ, আফ্রিকান ইউনিয়ন ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা দ্রুত সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষই সংঘাত বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি।
শেষ কথা
কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলে চলমান সংঘর্ষ দেশটির জন্য এক ভয়াবহ মানবিক সংকট সৃষ্টি করেছে। হাজার হাজার মানুষ বাস্তুহারা হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এম২৩ বিদ্রোহীদের দমন এবং শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠায় কঙ্গো সরকার কী পদক্ষেপ নেয়, তা এখন সময়ই বলে দেবে। তবে এ সংঘাত যে অদূর ভবিষ্যতে শেষ হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই, তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
Không có bình luận nào được tìm thấy