পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এক ৪৩ বছর বয়সী নারীর মৃত্যু হয়েছে। জানা গেছে, আলিপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে এক সপ্তাহ ধরে ভেন্টিলেশন সাপোর্টে থাকার পর মঙ্গলবার তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, ওই নারী অ্যাকিউট করোনারি সিন্ড্রোম, সেপটিক শক এবং অ্যাকিউট কিডনি ইনজুরির মতো একাধিক জটিল কো-মরবিডিটি সমস্যায় ভুগছিলেন, যা তাঁর শারীরিক অবস্থাকে আরও সংকটজনক করে তোলে।
এদিকে, পশ্চিমবঙ্গে করোনার সংক্রমণ ফের বাড়ছে। রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৪১ জন আক্রান্ত হয়েছেন, যার ফলে রাজ্যে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭২। বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৩৩৪ জন। যদিও স্বাস্থ্য দপ্তর জানিয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতি উদ্বেগজনক নয়, তবে সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রবণতা নিয়ে সতর্ক থাকা জরুরি।
ভারতজুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪,০২৬। একদিনে নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ৬৫ জন, এবং মারা গেছেন ৫ জন। কেরালা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্য, যেখানে এখন পর্যন্ত ১,৪১৬ জন সংক্রমিত। এছাড়াও গুজরাটে ৫৯ জন, কর্নাটকে ৫৮ জন এবং তামিলনাড়ুতে ২৬ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমানে দেশে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসটি অমিক্রনের দুটি সাব-ভ্যারিয়ান্ট— এলএফ৭ এবং এনবি১.৮.১, এবং নতুন স্ট্রেইন জেএন.১ দ্বারা ঘটিত। আক্রান্তদের উপসর্গ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাধারণ ফ্লুয়ের মতো— জ্বর, সর্দি, গলা ব্যথা, মাথাব্যথা, ক্লান্তি ও অবসাদ।
এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন রাজ্যকে হাসপাতালগুলিতে পর্যাপ্ত বিছানা, অক্সিজেন সিলিন্ডার, পরীক্ষার কিট ও ভ্যাকসিন মজুত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বয়স্ক, গর্ভবতী নারী, প্রসূতি ও শিশুদের জনবহুল এলাকা এড়িয়ে চলার এবং মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর মহাপরিচালক ডা. রাজীব বাহল বলেন, ‘‘কোভিড-১৯-এর এই নতুন রূপটি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই, তবে সতর্ক থাকা জরুরি। সরকার পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।’’
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী প্রতাপরাও যাদবও জানান, ‘‘কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য বিভাগ সতর্ক রয়েছে এবং রাজ্যগুলির পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে নজরদারি করা হচ্ছে।’’
সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলেও আতঙ্ক নয়, সতর্কতাই এখন সবচেয়ে জরুরি। সরকার এবং স্বাস্থ্য সংস্থাগুলি পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে। জনসাধারণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।