close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

কক্সবাজারে যেখানে সস্তায় মিলবে শামুক–ঝিনুক ও মুক্তার মালা..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
কক্সবাজারের হিমছড়ির আনসার স্টোরে ২০-১৫০ টাকার মধ্যেই মিলছে বাহারি শামুক-ঝিনুক ও কৃত্রিম মুক্তার অলংকার। পর্যটকদের নজর কাড়ছে সস্তা দামে হাতে তৈরি মালা-বালা-কানের দুল। বিক্রেতা কিশোর আতিকের মাসিক লাভ ১ ..

সমুদ্রের ঢেউয়ের কলতানে ভেসে বেড়ানো স্বপ্নের শহর কক্সবাজার। দেশের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতে প্রতি মুহূর্তে হাজির হয় হাজারো পর্যটক, যাঁদের মন ছুঁয়ে যায় এই বালুকাবেলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। কিন্তু শুধু সৌন্দর্যেই নয়, এখানকার হাতে তৈরি শামুক-ঝিনুক ও কৃত্রিম মুক্তার অলংকারও হয়ে উঠেছে এক অনন্য আকর্ষণ। বিশেষ করে হিমছড়ি এলাকায় ‘আনসার স্টোর’ নামের একটি ছোট দোকান যেন পর্যটকদের মনে গেঁথে দিচ্ছে সৌন্দর্যের পাশাপাশি সাশ্রয়ের গল্প।

‘আনসার স্টোর’-এর বিক্রেতা কিশোর মো. আতিক উল্লাহ, বয়স মাত্র ১৭ বছর। তাঁর দোকানে চোখ রাখলেই চোখে পড়ে বাহারি শামুকের মালা, কৃত্রিম মুক্তার চুড়ি, ঝিনুকের বালা, পাথরের দুলসহ নানা অনন্য পণ্য। দামও এমন যে কেউ একবার শুনলে অবাক হবেন। শামুক মালা মাত্র ৩০ টাকা, পাথরের মালা ৫০ টাকা, কৃত্রিম মুক্তার মালা মিলছে ১৫০ টাকায়। বালার মধ্যে শামুকেরটি ২০ টাকা, আর পাথর-মুক্তার বালা ৫০ টাকা।

এমনকি কানের দুল ২০ টাকা, চুল বাঁধার শামুক কাঠি ৬০ টাকা, শামুকের কাঁকড়া ক্লিপ ৭০ টাকা, আর হাতে তৈরি ঝিনুকের ব্যাগ পাওয়া যাচ্ছে ১২০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে। এমন দামে স্বপ্নের মতো উপহার কিনে নিচ্ছেন তরুণ-তরুণীরা।

সিলেট থেকে আসা পর্যটক নাসরিন আকতার বলেন, “মাত্র ১৫০ টাকায় এত সুন্দর মুক্তার মালা দেখে অবাক হয়েছি। আত্মীয়স্বজনদের জন্য উপহার হিসেবে নিখুঁত!” আরেক তরুণী ২৫ টাকায় দুটি বড় শামুক কেনেন, যেখানে মাত্র ১৫ টাকায় লিখিয়ে নেন — ‘ভালো থেকো, মনে রেখো’।

আতিক জানায়, আশেপাশের গ্রামের লোকজন সমুদ্র থেকে কুড়িয়ে আনেন শামুক-ঝিনুক। এগুলো শুকিয়ে আনসার স্টোরে বিক্রি করেন। কৃত্রিম মুক্তা ও রঙিন পাথর আসে কক্সবাজার শহর ও চট্টগ্রাম থেকে। আর আসল মুক্তা বা পাথর আনতে গেলে দাম পড়ে আকাশছোঁয়া — তাই সাধারণ পর্যটকদের নাগালে থাকে না। এ কারণেই কৃত্রিম অলংকারই হয় জনপ্রিয় পছন্দ।

প্রতিদিন এই ছোট দোকানেই বেচাবিক্রি হয় ২০-২৫ হাজার টাকার পণ্য! বৃহস্পতি ও শুক্রবারে ভিড় বেড়ে যায় কয়েকগুণ। মাস শেষে লাভ দাঁড়ায় প্রায় ১ লাখ টাকা। এই আয়ে চলছে তাঁর ভাইবোনদের পড়াশোনা, সংসারের খরচ — আর সামনে এগিয়ে যাওয়ার লড়াই।

আতিক উল্লাহর বাড়ি হিমছড়ি এলাকাতেই। তাঁর বাবার নাম আনসার উল্লাহ। সেই নামেই দোকানের নামকরণ। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে বড় আতিক স্থানীয় ওয়ামী একাডেমিতে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে। আশপাশে উচ্চবিদ্যালয় না থাকায় পড়াশোনার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও থেমে যেতে হয় তাকে।

তবে থেমে যায়নি স্বপ্ন। তিন বছর ধরে একাই চালাচ্ছে দোকান। ছোট ভাইবোনদের পড়াতে চায়, মানুষ করতে চায় — এই প্রতিজ্ঞা নিয়ে দিনের পর দিন দাঁড়িয়ে থাকে সমুদ্রের পাড়ে, ঝিনুকের দোকানে।

কক্সবাজারের লাবণি পয়েন্টের ছাতা মার্কেটে রয়েছে প্রায় ১৫৭টি ঝিনুক ও মুক্তার অলংকারের দোকান। সুগন্ধা পয়েন্টে আরও ৫০-৬০টি। এখানে প্রতিদিন গড়ে ১০-১৫ লাখ টাকার অলংকার বিক্রি হয় বলে জানায় সৈকত ঝিনুক শিল্প বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন।

তিনি জানান, “আগে সৈকতে প্রচুর পরিমাণে মরা শামুক-ঝিনুক ভেসে আসত। এখন অনেক কমে গেছে। ফলে পর্যটকদের চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন জায়গা থেকে কাঁচামাল আনতে হচ্ছে।” কৃত্রিম মুক্তা ও পাথরও আসে বিদেশ থেকে। তবুও দেশীয় কাঁচামালেই যারা কারিগরি দেখাচ্ছেন, তাদের কদর বাড়ছে দিনদিন।

সমুদ্রপাড়ের ঢেউয়ের শব্দে যেমন থাকে ছন্দ, তেমনই হিমছড়ির আনসার স্টোরের প্রতিটি অলংকার যেন বলছে এক আত্মপ্রত্যয়ের গল্প। কম দামে যাদের পেছনে থাকে সংগ্রামের ইতিহাস, পরিশ্রমের ঘাম আর ভবিষ্যতের আশাবাদ। কক্সবাজার ঘুরতে গেলে শুধু সমুদ্র নয়, ঘুরে আসতে ভুলবেন না হিমছড়ির এই ছোট্ট অলংকারের রাজ্য থেকে।

Aucun commentaire trouvé


News Card Generator