খালেদা জিয়াই দেশের প্রথম নারী মুক্তি'যো'দ্ধা, তারেক-আরাফাত শিশু যোদ্ধা: বি'ত'র্কিত মন্তব্যে জাবি উপাচার্য..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
রমনায় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্মরণে আয়োজিত এক আলোচনায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দাবি করেছেন, বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা এবং তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান ছিল..

শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে এক আলোচনা সভায় বিতর্কিত বক্তব্য দিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান।

এই আলোচনায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, “প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা হচ্ছেন আমাদের মা, গণতন্ত্রের মা, বেগম খালেদা জিয়া। প্রথম শিশু মুক্তিযোদ্ধা হচ্ছেন শিশু তারেক ও শিশু আরাফাত।” তার এই বক্তব্যের একটি অংশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে পড়ে। ফেসবুকে হাজার হাজার ব্যবহারকারী ভিডিওটি শেয়ার করেছেন এবং মন্তব্য করেছেন, যার বেশিরভাগই এই বক্তব্য নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন।

উল্লেখ্য, বক্তব্যের ভাইরাল অংশটি ৪০ সেকেন্ডের হলেও, অনুসন্ধানে জানা যায়, ড. কামরুল আহসানের পুরো বক্তব্য ছিল প্রায় ৪ মিনিটের। তবে বক্তব্যের অন্যান্য অংশেও ছিল কিছু দাবি ও তথ্য, যা ইতিহাসবিদ ও সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।

বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, “একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতেই শহীদ জিয়াউর রহমান তার ব্যাটেলিয়নের সদস্যদের নিয়ে শপথ করেছিলেন—তারা দেশকে স্বাধীন করবেন। সেই রাতে ৩০০ সৈনিক তার সঙ্গে শপথ নিয়েছিলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধের মূলভিত্তি তৈরি করেছিলেন। সেই সৈনিকদের স্ত্রী ও সন্তানদের নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় প্রথমে থাকা উচিত।”

উপাচার্যের মতে, মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমানের অবদান ও ত্যাগ ভুলে যাওয়া যাবে না। তিনি বলেন, “সাড়ে ৪ হাজার টাকা বেতন পেতেন, ১৫০ টাকা দিয়ে দিতেন রিলিফ ফান্ডে, বাকি দিয়ে চলতো তার সংসার। এটাই ছিল জিয়ার সততা। আর এই সততাই জাতির আস্থার জায়গা তৈরি করেছিল। বিএনপি এমনি এমনি এত বড় দল হয়নি।”

তবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত বা সমাজের অন্যান্য অংশ থেকে এই বক্তব্য নিয়ে শুরু হয় তীব্র প্রতিক্রিয়া। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন—কোন ঐতিহাসিক সূত্র অনুযায়ী বেগম খালেদা জিয়াকে নারী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে? কিংবা শিশু মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমানের ভূমিকাই বা কী ছিল?

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক কামরুল আহসানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়, তবে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অতীতেও দাবি করেছেন, বেগম খালেদা জিয়া পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে বন্দি ছিলেন এবং তিনি মুক্তিযোদ্ধা। একই সঙ্গে তারেক রহমানকে 'শিশু মুক্তিযোদ্ধা' বলেও অভিহিত করেছেন, কারণ তিনি তখন মায়ের সঙ্গে কারাগারে ছিলেন।

এই বক্তব্যগুলো নতুন কিছু নয়, তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন উপাচার্যের মুখে এমন বিতর্কিত এবং প্রশ্নবিদ্ধ বক্তব্য আসায় তা আরও বেশি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মতো একটি সংবেদনশীল ও ঐতিহাসিক বিষয়কে রাজনৈতিক ব্যাখ্যা দিয়ে উপস্থাপন করলে তা বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে এবং জাতির ইতিহাস বিকৃত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের কাছ থেকে এমন বক্তব্য অনাকাঙ্ক্ষিত বলেও অনেকে মত দিয়েছেন।

একজন বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য হিসেবে ড. কামরুল আহসানের এমন বক্তব্য একদিকে রাজনৈতিক বিতর্ক উস্কে দিয়েছে, অন্যদিকে প্রশ্ন তুলেছে একাডেমিক নেতৃত্ব ও ঐতিহাসিক বস্তুনিষ্ঠতার মান নিয়েও। বিষয়টি এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছাড়িয়ে সাধারণ মানুষের আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Комментариев нет