জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম এক সাহসী ঘোষণা দিয়েছেন, যা রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তিনি বলেন, “গত এক বছর এক মাসে আমার বিরুদ্ধে কেউ যদি এক টাকারও দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ করতে পারে, আমি সঙ্গে সঙ্গে সব ধরনের রাজনীতি থেকে ইস্তফা দেব।
শনিবার (৪ অক্টোবর) পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার এনসিপি কার্যালয়ে মসজিদ, মন্দির, ঈদগাহ এবং রাস্তা সংস্কার নিয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ ঘোষণা দেন। সভায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান কমিটির সদস্য এবং এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, সারজিস আলমের উদ্যোগে আটোয়ারী উপজেলার বিভিন্ন মসজিদ, মন্দির, ঈদগাহ এবং রাস্তা সংস্কারের জন্য একাধিক আবেদন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়। তার প্রচেষ্টার ফলেই চলতি অর্থবছরে প্রথম ধাপে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ আসে ৩০টি মসজিদের জন্য, ৯টি মন্দিরের জন্য এবং ১১টি রাস্তা সংস্কারের জন্য। সেই বরাদ্দের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি।
সভায় সারজিস আলম বলেন, “কেউ যেন ভালো কাজের পথে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। একটি পাকা রাস্তা নির্মাণ হোক বা একটি মসজিদ-মন্দির উন্নয়ন হোক – এর সুফল ভোগ করবে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। তাই কেবল এনসিপি নয়, সব রাজনৈতিক দলকেই উন্নয়নের কাজে এগিয়ে আসতে হবে। একসাথে কাজ করতে পারলে আটোয়ারী আর পিছিয়ে থাকবে না।
তিনি আরও বলেন, “এই জায়গা হিংসা বা বিদ্বেষের নয়। এখানে প্রতিযোগিতা হবে কে কত বেশি ভালো কাজ করতে পারে তা নিয়ে। উন্নয়নই হবে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। আমি কখনো ভাবিনি মৃত্যুর আগে আল্লাহ আমাকে এত সম্মান ও দায়িত্ব দেবেন। এখন আমার একমাত্র কাজ হচ্ছে এই দায়িত্ব ন্যায় ও সততার সঙ্গে পালন করা।
রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের উদ্দেশ্যে তিনি খোলা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেন, “আমার বিরুদ্ধে এক টাকারও দুর্নীতির প্রমাণ দিতে পারলে আমি রাজনীতি ছেড়ে চলে যাব। আমি এমন কাউকে চেয়ারম্যান বা জনপ্রতিনিধি হিসেবে চাই, যে কখনো ভাববে না বাজেটের টাকা মেরে দিয়ে কোথাও জমি কিনবে বা বাড়ি করবে।
দুর্নীতির বিষয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে সারজিস আলম বলেন, “আমাদের বরাদ্দের টাকা উত্তোলনের সময় যদি কোনো অফিসে এক টাকাও ঘুষ দিতে হয়, তাহলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একইভাবে, টাকা পাওয়ার পর যদি কোনো মসজিদ, মন্দির বা ঈদগাহ কমিটির সভাপতি বা সম্পাদক টাকা আত্মসাৎ করেন, তাহলেও তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সভা শেষে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং পঞ্চগড় জেলা পরিষদ থেকে আটোয়ারীর মসজিদ, মন্দির, ঈদগাহ ও রাস্তা সংস্কারের জন্য অনুমোদিত বরাদ্দের তালিকা পড়ে শোনান সারজিস আলম।
তার এই বক্তব্য এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জ স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই বলছেন, সারজিস আলমের মতো নেতৃত্ব থাকলে আটোয়ারী উপজেলার সার্বিক উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত হবে এবং সাধারণ মানুষের আস্থা রাজনীতির প্রতি আবারও ফিরে আসবে।