যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বর্তমানে চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভারত সফর করছেন। সফরের দ্বিতীয় দিনেই মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) কাশ্মীরের পর্যটন এলাকা পহেলগাঁওতে ঘটে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা। এই সময় জেডি ছিলেন নয়াদিল্লিতে, স্ত্রী ঊষা ভ্যান্স ও সন্তানদের সঙ্গে। সপরিবারে তার এই সফর ভারতের সঙ্গে আমেরিকার কৌশলগত বন্ধুত্বেরই বহিঃপ্রকাশ।
অবশ্য, সফর যতটা আন্তরিকতায় মোড়ানো, ততটাই আতঙ্ক ছড়িয়েছে কাশ্মীরের হামলা। ভারতের সাম্প্রতিক ইতিহাসে এটি সবচেয়ে আলোচিত হামলাগুলোর একটি। নিহত ও আহতদের সংখ্যা এখনও স্পষ্ট নয়, তবে সেনাবাহিনী বলছে, “হামলাকারীদের খোঁজ চলছে, দ্রুতই ধরা পড়বে।”
কাকতালীয় না পরিকল্পিত?
হামলার সময় এবং স্থানকে ঘিরে তৈরি হয়েছে নানা জল্পনা। যখন ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করছে, তখনই এই ভয়াবহ হামলা কি নিছক কাকতালীয়? নাকি কোনো রাজনৈতিক বার্তা? বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি “হাই প্রোফাইল কূটনৈতিক সফরের সময়ে আতঙ্ক তৈরি করে আন্তর্জাতিক মনোযোগ কাড়ার চেষ্টাও হতে পারে।”
🇺🇸 জেডি ভ্যান্স ও ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া:
হামলার পরপরই বিবৃতি দেন জেডি। তিনি বলেন:
“পহেলগামে প্রাণঘাতী হামলার খবরে আমি এবং ঊষা গভীরভাবে মর্মাহত। ভারতে কাটানো সময়ের প্রতিটি মুহূর্ত আনন্দময়, কিন্তু এই ঘটনার কারণে আমরা শোকাহত।”
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে ভারতের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ফোনে কথা বলেন, এবং বলেন:
“সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমেরিকা ভারতের পাশে আছে। সব ধরনের সহায়তা দিতে আমরা প্রস্তুত।”
ভারতের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা ও ধর্মীয় উত্তেজনা:
এই হামলার পেছনে আরও একটি প্রেক্ষাপট আলোচিত হচ্ছে—সম্প্রতি ভারতে ওয়াকফ আইন সংশোধন, হোলি উৎসবে মুসলিমদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ, এবং মসজিদের সামনে ডি.জে পার্টি করার মতো ঘটনা নিয়ে সংখ্যালঘুদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ বিরাজ করছে।
অনেকেই বলছেন, এই হামলা হয়তো দেশীয় কোনো ক্ষোভ থেকেও উত্থিত হতে পারে, কিংবা বাইরের উসকানিতে চালানো পরিকল্পিত হামলা হতে পারে।
কারা জড়িত?
ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ও সংবাদমাধ্যম জানায়, হামলার দায় স্বীকার করেছে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (TRF)’, যাদের জন্ম ২০১৯ সালে ৩৭০ ধারা বিলোপের পর।
ভারতের দাবি, এটি মূলত লশকর-ই-তৈয়বার একটি ছায়া সংগঠন, এবং পাকিস্তানের মদদপুষ্ট।
পরবর্তী পদক্ষেপ:
কাশ্মীরজুড়ে শুরু হয়েছে সাঁড়াশি অভিযান। হামলাকারীদের ধরতে সীমান্ত এলাকাগুলোতে নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।
সরকার বলছে,
“এই হামলার প্রকৃত উদ্দেশ্য এবং পেছনের শক্তিগুলোকে উন্মোচন করতেই এখন আমাদের সর্বোচ্চ মনোযোগ।”
একদিকে ভারত-আমেরিকার ঘনিষ্ঠতা, অন্যদিকে কাশ্মীরজুড়ে রক্তপাত—এই দুটি চিত্র একসঙ্গে দেখা শুধু অস্বস্তিকর নয়, বরং ইঙ্গিত দিচ্ছে এক নতুন ভূরাজনৈতিক সমীকরণের। প্রশ্ন উঠছে, কাশ্মীর কি আবারও হয়ে উঠছে আন্তর্জাতিক সংঘাতের ময়দান?