চাকরির সংকটে দক্ষতার বিকল্প নেই। প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বে টিকে থাকতে হলে প্রয়োজন যুগোপযোগী কারিগরি শিক্ষা। এমন মন্তব্য করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা ড. রফিকুল আবরার।
কারিগরি শিক্ষা ছাড়া দেশের ভবিষ্যৎ চিন্তা করা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা প্রফেসর ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার। তিনি বলেন, বর্তমান বিশ্ব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভরতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আর এই প্রেক্ষাপটে শুধুমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রির মাধ্যমে আর এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। বরং প্রয়োজন, কোয়ালিটি কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে বাস্তব দক্ষতা অর্জন।
গত সোমবার (৭ জুলাই) নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার গকুলদাশের বাগ এলাকায় জামেয়া ইসলামিয়া আলিম মাদরাসায় আয়োজিত এক বিশেষ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, আমাদের মাঝে এখনও কারিগরি শিক্ষার ব্যাপারে যে অনীহা রয়েছে, তা দুর্ভাগ্যজনক। অথচ এখন চাকরির সুযোগ দিন দিন সীমিত হচ্ছে, অন্যদিকে কারিগরি জ্ঞানসম্পন্নদের জন্য দেশ-বিদেশে সুযোগ বাড়ছে।
তিনি আরও বলেন, অভিভাবকদের মানসিকতা বদলাতে হবে। সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে তাদেরকে শুধু পরীক্ষার জন্য গড়লে চলবে না। তাদের এমন দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে, যেন তারা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে, প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে পারে।
শিক্ষা উপদেষ্টা আরও বলেন, সরকারের উচিত এমন কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা যেটার চাহিদা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে রয়েছে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যাতে একজন শিক্ষার্থী কেবল ডিগ্রি অর্জন করেই নয়, বাস্তব দক্ষতা নিয়েও সমাজে অবদান রাখতে পারে।
অনুষ্ঠানে ড. আবরার আরও বলেন,আমরা একসময় অধিকারহীন ছিলাম। আমাদের পূর্বপুরুষেরা প্রজার মতো জীবন কাটিয়েছেন। আজ এই স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য আমাদের হাতে অল্প সময়ের জন্য দায়িত্ব এসেছে। এই দায়িত্ব আমরা যেন এমনভাবে পালন করি, যাতে আগামী প্রজন্ম দক্ষ, নৈতিক ও মানবিক হয়।
তিনি বলেন, জুলাই মাস আমাদের গর্বের মাস। এই মাসেই আমরা মুক্তি পেয়েছিলাম। তাই প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেন জুলাই উপলক্ষে অনুষ্ঠান আয়োজন করে শহীদদের স্মরণ করে, আন্দোলনকারীদের কৃতজ্ঞতা জানায় এবং আহতদের পাশে দাঁড়ায়—এই আহ্বান জানান তিনি। তার মতে, রাষ্ট্র তার জায়গা থেকে কাজ করছে, কিন্তু আমাদেরও উচিত ব্যক্তি ও সমাজের পক্ষ থেকে সহযোগিতার হাত বাড়ানো।
শেষে তিনি বলেন, শিক্ষার উদ্দেশ্য শুধু চাকরি পাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এমন শিক্ষা দিতে হবে, যেটা মানুষকে গঠনমূলক চিন্তা করতে শেখায়, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে এবং নিজেকে আত্মনির্ভরশীল করে তোলে।
এই বক্তব্যের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে যায়, শিক্ষার ভবিষ্যৎ কেবল প্রথাগত বইয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং প্রযুক্তি ও দক্ষতার সংমিশ্রণে তৈরি এমন এক পথ, যেখানে চলতে জানলেই ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে।