ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর কড়াইল বস্তির হাজারো ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের প্রধান চাহিদা এখন উষ্ণতা ও খাদ্য
রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) রাতে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১৫০০ বসতঘর পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার পর এক চরম মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টা ধরে ফায়ার সার্ভিসের ২০টি ইউনিট চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হলেও ততক্ষণে বস্তির প্রায় ৫০ হাজার বাসিন্দা সর্বস্বান্ত হয়েছেন। খোলা আকাশের নিচে ঠাঁই নেওয়া এসব মানুষ এখন তীব্র শীত ও ক্ষুধার সঙ্গে লড়াই করছেন।
ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শীতের এই সময়ে ঘর হারানো তাদের জীবনকে আরও কঠিন করে তুলেছে। ভ্যানচালক মনোয়ার হোসেনের মতো অনেকেই সারারাত শিশুসন্তানদের নিয়ে খোলা আকাশের নিচে কাটাতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি বলেন, "মাঝরাত থেকে ভোর পর্যন্ত শীতে জবুথবু হয়ে ছিলাম। গায়ে দেওয়ার মতো একটা কাঁথাও ছিল না। এখন বাচ্চাদের সর্দি লেগেছে, কিন্তু ওষুধ কেনারও সামর্থ্য নেই।" তাদের বসতঘর তৈরির উপকরণ ও পুঁজি সবকিছুই আগুনে পুড়ে গেছে।
বস্তির বাসিন্দাদের প্রধান দাবি এখন দ্রুত জরুরি ত্রাণ সহায়তা। তাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন গরম কাপড়, কম্বল এবং শুকনো খাবার। অনেকেই অভিযোগ করেন, আগুন লাগার পর তাড়াহুড়োয় কেউ কেউ শুধুমাত্র পরিধেয় কাপড় ছাড়া আর কিছুই বের করতে পারেননি। এই বিশাল সংখ্যক ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসন ও জরুরি ত্রাণ নিশ্চিত করতে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ একান্ত অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বস্তির এই বিপুল সংখ্যক মানুষের দ্রুত খাদ্য ও বস্ত্রের জোগান না দিলে পরিস্থিতি আরও শোচনীয় হতে পারে।
এই ঘটনায় অনেক দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষ তাদের স্বল্প সঞ্চয়টুকুও হারিয়েছেন। বনানীর বিপণিবিতানের কর্মী আবুল খায়ের, যার বাসা আগুনের উৎসস্থলের পাশেই ছিল, তিনি শোকে পাথর। স্ত্রীর সঙ্গে এক কোণে বসে তিনি শুধু পোড়া ধ্বংসস্তূপের দিকে তাকিয়ে আছেন। আগুনে তাদের সাত বছরের সাজানো সংসার এক মুহূর্তে শেষ হয়ে গেছে।



















