close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

জুনে ডেঙ্গুর তাণ্ডব, আগের ৫ মাসের চেয়েও বেশি সংক্রমণ

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
জুনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৫৮০৪ জন—পাঁচ মাসের চেয়েও বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই জরুরি জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি ঘোষণা করা না হলে অবস্থা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।..

বাংলাদেশে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪,৩৪৫ জন। কিন্তু জুন মাসেই সেই সংখ্যা এক লাফে বেড়ে হয়েছে ৫,৮০৪ জন—যা পাঁচ মাসের সম্মিলিত সংখ্যার তুলনায় ১,৪৫৯ জন বেশি। জনস্বাস্থ্য বিশ্লেষকদের মতে, এ অবস্থায় ডেঙ্গু আর শুধু একটি মৌসুমি রোগ নয়—এটি এখন ‘জরুরি জনস্বাস্থ্য সংকট’-এ রূপ নিচ্ছে।

সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে ডেঙ্গুর ইতিহাসে জুন মাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে এই বছর। এর আগে সর্বোচ্চ সংক্রমণ হয়েছিল ২০২৩ সালের জুনে, যেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫,৯৫৬ জন।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জুন মাসে স্বাভাবিকের তুলনায় অন্তত ২০% কম বৃষ্টি এবং বাতাসে অত্যধিক আর্দ্রতা ডেঙ্গুবাহী এডিস মশার জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করেছে। আবহাওয়ার এই অনুকূল পরিবেশে মশা দ্রুত বিস্তার লাভ করেছে, যা সংক্রমণ বৃদ্ধির বড় কারণ।

আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান কীটতত্ত্ববিদ তৌহিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আবহাওয়ার বর্তমান অবস্থা ডেঙ্গুর জন্য একেবারে আদর্শ। এর ফলে মশার বিস্তার এবং সংক্রমণের হার আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।

বরগুনায় করা সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, এবার ডেঙ্গুর নতুন ধরন সেরোটাইপ–৩ ছড়াচ্ছে, যা আগে খুব বেশি দেখা যায়নি। এই সেরোটাইপ নতুন করে সংক্রমণের হার বাড়ানোর পাশাপাশি রোগীর শারীরিক পরিস্থিতিও বেশি জটিল করে তুলছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০২৩ সালে ডেঙ্গুর প্রধান সেরোটাইপ ছিল টাইপ–২। এবার নতুন টাইপ দেখা যাওয়ায় আরও অজানা ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

মঙ্গলবার পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০,৬৮২ জনে। শুধু গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৩৮৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন এবং একজন মারা গেছেন। এ নিয়ে ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৪৩ জনের।

জুন মাসেই ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ২০ জনের, যেখানে আগের পাঁচ মাসে ছিল ২৩ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দুটি পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষার ফি নির্ধারণ করেছে। সরকারি হাসপাতালে এনএস, আইজিজি এবং আইজিএম পরীক্ষার সর্বোচ্চ ফি রাখা হয়েছে ৫০ টাকা এবং বেসরকারি হাসপাতালে ৩০০ টাকা। সিবিসি পরীক্ষার জন্য বেসরকারি হাসপাতালে ৪০০ টাকা ধার্য করা হয়েছে।

তবে সাধারণ মানুষের মতে, কেবলমাত্র ফি নির্ধারণই যথেষ্ট নয়, জরুরি ভিত্তিতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে পরিকল্পিত ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ দরকার।

বরগুনা জেলায় ডেঙ্গুর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি—এ পর্যন্ত আক্রান্ত ২,৮৩৯ জন, যা দেশের মোট আক্রান্তের প্রায় ২৫%। ঢাকার বাইরের জেলাগুলো যেমন বরিশাল, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও কক্সবাজারেও সংক্রমণের হার তুলনামূলকভাবে বেশি।

স্বাস্থ্যবিদদের মতে, জরুরি ভিত্তিতে অঞ্চলভিত্তিক ম্যাপিং করে সংক্রমণের হটস্পট চিহ্নিত করা এখন সবচেয়ে প্রয়োজনীয় কাজ। জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, “এখন যেভাবে ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে, তাতে একে আর হেলাফেলা করার সুযোগ নেই। এখনই ‘জরুরি জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি’ ঘোষণা করতে হবে।

মুশতাক হোসেন আরও বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের তৎপরতা যথেষ্ট নয়। প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দেও সমস্যা দেখা যাচ্ছে। এ অবস্থায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) সহায়তা নেওয়া উচিত।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অঞ্চলভিত্তিক ম্যাপিংয়ের কাজ করবে আইইডিসিআর। তবে এখনো তাদের কার্যকর কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। ২১ জুন গঠিত ১১ সদস্যের কারিগরি কমিটিতে থাকা অধ্যাপক কবিরুল বাশার জানান, তাঁকে এখনো কোনো দায়িত্ব বা তথ্য জানানো হয়নি।

বর্তমানে যেভাবে সংক্রমণ বাড়ছে এবং মশার বিস্তার হচ্ছে, তা আগামী দিনে ডেঙ্গুকে জাতীয় দুর্যোগে রূপ দিতে পারে। এখনই সঠিক পরিকল্পনা, দ্রুত প্রতিক্রিয়া ও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম না নেওয়া হলে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।

Walang nakitang komento