close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

জুলাইয়ের প্রথম দিনেও মিছিলের সামনে ছিলেন আবু সাঈদ

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
রংপুরের আবু সাঈদ ছিলেন শুধু একজন ছাত্র নন, বরং এক চলমান আন্দোলনের জ্বলন্ত প্রতীক। কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরু থেকেই যিনি রাজপথে ছিলেন, জীবন দিলেন পুলিশের গুলিতে। শহীদের মর্যাদায় ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন য..

২০২৪ সালের উত্তাল জুলাই আন্দোলন, বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির ইতিহাসে একটি অমর অধ্যায় হয়ে থাকবে। আর এই অধ্যায়ের কেন্দ্রে ছিলেন এক তরুণ—আবু সাঈদ। রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের এই ছাত্রটি শুধু একটি ব্যানার কিংবা স্লোগানের অংশ ছিলেন না, বরং আন্দোলনের হৃদস্পন্দন হয়ে উঠেছিলেন।

জুলাই মাসের প্রথম দিনেই যখন সারা দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন নতুন করে জোয়ার তুলছে, তখন রংপুরের শেখ রাসেল চত্বরে আয়োজিত মানববন্ধনে প্রথম সারিতে দাঁড়িয়েছিলেন আবু সাঈদ। ‘১৮ সালের পরিপত্র বহাল’ রাখার দাবিতে শুরু হওয়া এই আন্দোলনে তিনি ছিলেন নির্ভীক, জ্বালাময়ী কণ্ঠের অধিকারী। তার কণ্ঠেই উচ্চারিত হয়েছিল সেই সময়কার প্রধান স্লোগান—“আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠীরা বলেন, “সাঈদ শুধু একজন নেতা নয়, সে ছিল আমাদের চেতনার মশাল। সে সামনে থাকলে পিছিয়ে যাওয়ার কথা কেউ চিন্তাও করত না।

১৬ জুলাই। রংপুরের উত্তপ্ত রাজপথ। আন্দোলন তখন উত্তাল, দাবির প্রতি সরকারের দৃষ্টি নেই। সে দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেটের সামনে এক বিশাল মিছিল। হঠাৎ পুলিশের ছোড়া ছররা গুলিতে বিদ্ধ হন আবু সাঈদ। রাজপথ লাল হয় তার রক্তে। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর কিছুক্ষণের মধ্যেই চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

সেই মুহূর্তেই আন্দোলনের চিত্র পাল্টে যায়। রংপুর থেকে ঢাকায়, চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লা—সবখানে ছড়িয়ে পড়ে আবু সাঈদের রক্তাক্ত ছবি, তার মৃত্যু সংবাদ। দেশজুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া। পরদিন সব বড় শহরে ছাত্ররা কালো ব্যাজ ধারণ করে শ্রদ্ধা জানান। মোমবাতি প্রজ্বালিত হয় রাজপথে, মুখে শুধু একটাই স্লোগান—“শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না।

১৫ জুলাই, মৃত্যুর মাত্র একদিন আগে, আবু সাঈদ নিজের ফেসবুকে একটি আবেগঘন পোস্ট দেন। তিনি স্মরণ করেন ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানে নিহত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মোহাম্মদ শামসুজ্জোহাকে।

স্যার! এই মুহূর্তে আপনাকে ভীষণ দরকার। আপনি মরেও অমর। আপনার চেতনায় আমরা উদ্ভাসিত।… অন্তত একজন ‘শামসুজ্জোহা’ হয়ে মরে যাওয়াটা অনেক বেশি আনন্দের, সম্মানের আর গর্বের।

এই লেখাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। অনেকে বলেন, এই লেখাই যেন ছিল তার শেষ চিঠি, শেষ আহ্বান।

মৃত্যুর পরেও থেমে থাকেনি আবু সাঈদ: নাম লেখা হলো ইতিহাসে

আন্দোলনের প্রথম শহীদ হিসেবে আবু সাঈদের আত্মত্যাগ এখন কেবল একটি স্মৃতি নয়, প্রেরণার উৎসও। আন্দোলনের কর্মীরা রংপুর পার্ক মোড়ের নাম পরিবর্তন করে দেন ‘আবু সাঈদ চত্বর’। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেটের নামকরণ করা হয় “শহীদ আবু সাঈদ গেট”।

  • বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভেনশন সেন্টারের নতুন নাম: ‘শহীদ আবু সাঈদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টার’

  • রংপুর জেলা সুইমিং পুলের নাম রাখা হয়: ‘শহীদ আবু সাঈদ সুইমিং কমপ্লেক্স’

আবু সাঈদ ছিলেন না কোনো রাজনৈতিক দলের নির্দিষ্ট কর্মী, ছিলেন না ক্ষমতার ছায়ায় বড় হওয়া কেউ। তিনি ছিলেন একজন সাধারণ ছাত্র, যার গলায় ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আর চোখে ছিল একটি সুন্দর বাংলাদেশের স্বপ্ন। তিনি জীবন দিয়েছেন, কিন্তু রেখে গেছেন এমন একটি ইতিহাস, যেটা প্রজন্মের পর প্রজন্মের ছাত্রদের আন্দোলনে সাহস ও প্রেরণা জোগাবে।

No comments found


News Card Generator