জুলাই সনদের খসড়া অসম্পূর্ণ, কিছু অংশ বিপজ্জনক: জামায়াত

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
Jamaat-e-Islami has called the draft of the July Charter incomplete and dangerous, warning that the proposed implementation within two years of an elected government poses serious risks for the countr..

জুলাই সনদের খসড়াকে অসম্পূর্ণ ও বিপজ্জনক বলে মন্তব্য করেছে জামায়াতে ইসলামী। দলটি বলছে, নির্বাচিত সরকারকে দুই বছরের মধ্যে বাস্তবায়নের প্রস্তাব দেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

জুলাই সনদের খসড়াকে ‘অসম্পূর্ণ’ এবং কিছু অংশকে ‘বিপজ্জনক’ উল্লেখ করে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, “নির্বাচিত সরকারকে দুই বছরের মধ্যে বাস্তবায়নের যে প্রস্তাব খসড়ায় রাখা হয়েছে, তা দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক।”
তিনি এই মন্তব্য করেন ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ২১তম দিনের বিরতিতে।

তাহের জানান, জামায়াত নিজস্ব একটি পূর্ণাঙ্গ খসড়া সনদ প্রস্তুত করছে, যা শিগগিরই কমিশনে জমা দেওয়া হবে। তার ভাষায়, “আজকে যারা বলছে এটা একটা নমুনা মাত্র, ভুল হয়েছে—তাহলে মন্তব্যের দরকার নেই। কিন্তু যদি এটিই মূল প্রস্তাব হয়, তাহলে আমরা এর বিরোধিতা করছি।”

তিনি আরো বলেন, “সংলাপে যেসব বিষয়ে একমত হচ্ছি, সেগুলো আইনি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। নইলে ভবিষ্যতে তা টেকসই হবে না।” এই লক্ষ্যে তিনি দুটি পথের প্রস্তাব দেন:
১. অধ্যাদেশ জারি করে একটি আইনি কাঠামো তৈরি করে পরবর্তীতে তা নির্বাচিত পার্লামেন্টে অনুমোদন করানো।
২. গণভোটের মাধ্যমে জনগণের চূড়ান্ত অনুমোদন গ্রহণ করা।

তাহের স্পষ্ট করে বলেন, “আমরা ঐকমত্যের পক্ষে, তবে সেটা হতে হবে কার্যকর ও আইনি কাঠামোর মধ্যে। নতুবা রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হবে।”

তিনি জানান, সংলাপে কেয়ারটেকার সরকার গঠনের কাঠামো নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়েছে। প্রায় সব রাজনৈতিক দল একমত যে আগামী জাতীয় নির্বাচন একটি নিরপেক্ষ কেয়ারটেকার সরকারের অধীনেই অনুষ্ঠিত হতে হবে। কেবল বিএনপি কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছে।

জামায়াত প্রস্তাবিত কাঠামোর বিস্তারিতও তুলে ধরে। এতে বলা হয়, পাঁচ সদস্যের একটি বাছাই কমিটি থাকবে—প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতা, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার (বিরোধী দলের), এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দলের একজন প্রতিনিধি। এই কমিটি ১২ জন সম্ভাব্য প্রার্থীর মধ্য থেকে কেয়ারটেকার সরকারের প্রধান নির্বাচন করবে।

কোনো প্রার্থীর বিষয়ে যদি একমত না হয়, তাহলে সিদ্ধান্ত হবে একাধিক ধাপে—প্রথমে সর্বসম্মতি, পরে একচয়েস ভোটিং, এবং এরপর প্রয়োজনে র‍্যাংক চয়েস ভোটিং। এই প্রক্রিয়ায় সাতজন ভোটার থাকবেন: আগের পাঁচজন রাজনীতিবিদের পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের একজন করে বিচারপতি।

তাহের বলেন, “বিচারপতি দু’জনকে যুক্ত করার কারণ হলো—যেন রাজনৈতিক পক্ষগুলোর বাইরে নিরপেক্ষতার নিশ্চয়তা বজায় থাকে। এতে করে হর্স ট্রেডিংয়ের ঝুঁকি অনেকটা কমে যাবে।”

তবে বিএনপির আপত্তি এই যে—যদি বাছাই কমিটিতে ঐকমত্য না হয়, তাহলে বিষয়টি সংসদে পাঠানো হোক। কিন্তু জামায়াতসহ অধিকাংশ দলের মতে, সংসদে পাঠালে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো কঠিন হবে। তাহের বলেন, “সংসদে পাঁচ-ছয়টা দল থাকলেও, এই সংলাপে ৩০টিরও বেশি দলের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। তাই এখানেই সিদ্ধান্ত হওয়া জরুরি।”

তাহের আবারো সতর্ক করে বলেন, “আইনি কাঠামো ও কার্যকর ঐকমত্য না থাকলে পুরো প্রক্রিয়াটাই ভেঙে পড়তে পারে, যার ফলাফল হবে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা।”

Nessun commento trovato