close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

জুলাই সনদ নিয়েই দ্বন্দ্ব: জামায়াত-এনসিপির অবিলম্বে বাস্তবায়নের দাবি, বিএনপির শর্ত নির্বাচন শেষে সংসদে..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
Fresh tension over July Charter: Jamaat-NCP demands immediate implementation through referendum or ordinance, while BNP insists only the elected parliament can decide.

জুলাই সনদকে ঘিরে রাজনীতিতে নতুন উত্তাপ। জামায়াত-এনসিপি অবিলম্বে গণভোট বা অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন চাইলেও বিএনপি বলছে—আগামী নির্বাচিত সংসদই সিদ্ধান্ত নেবে।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে জুলাই সনদ এখন অন্যতম আলোচিত বিষয়। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দীর্ঘদিনের আলোচনার পর রাজনৈতিক দলগুলোর হাতে এর খসড়া পৌঁছে দিয়েছে। কমিশন জানিয়েছে, আগামী সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে এই সনদ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে। তবে ঘোষণার আগে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে—এটি বাস্তবায়ন হবে কীভাবে? এখানেই সৃষ্টি হয়েছে বড় ধরনের রাজনৈতিক বিভাজন।

বিএনপি তাদের অবস্থান পরিষ্কার করে বলছে, নির্বাচিত সংসদ ছাড়া জুলাই সনদ বাস্তবায়নের কোনো বৈধতা নেই। দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত সংসদই সবচেয়ে শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম। তাই নির্বাচনের আগে এই সনদ কার্যকর করার কোনো প্রয়াস গণতান্ত্রিক পদ্ধতিকে দুর্বল করবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, “আমরা বিশ্বাস করি, আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে একটি কার্যকর ব্যবস্থা বের করা সম্ভব। তাই এ নিয়ে আলোচনায় বসতে আমরা প্রস্তুত।”

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণঅধিকার পরিষদসহ কয়েকটি দল একেবারে ভিন্ন অবস্থান নিয়েছে। তাদের দাবি, নির্বাচনের আগেই এই সনদ বাস্তবায়ন করতে হবে। তারা বলছে, গণভোট, গণপরিষদ নির্বাচন কিংবা রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ—যেকোনো উপায়ে জুলাই সনদ কার্যকর করা জরুরি। তাদের মতে, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে হলে আগে থেকেই একটি স্বচ্ছ সনদ কার্যকর করতে হবে, নইলে নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, “এখানে সিদ্ধান্ত নিতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোকে। আমরা কাউকে কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে চাই না। দলগুলো কীভাবে সনদ বাস্তবায়ন চায়—সেই বিষয়ে আমরা তাদের সঙ্গে চূড়ান্তভাবে আলোচনা করবো।”

এদিকে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির অবস্থান এক ধরনের “প্রতীক্ষার কৌশল।” তারা নির্বাচনের পর সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার আশা করছে এবং সেক্ষেত্রে সনদের বাস্তবায়ন তাদের নিয়ন্ত্রণেই থাকবে। অন্যদিকে জামায়াত ও এনসিপির মতো দলগুলো নির্বাচন-পূর্ব বাস্তবায়নের দাবি তুলছে, কারণ তাদের আশঙ্কা—বড় দলগুলো ক্ষমতায় গেলে সনদ বাস্তবায়নে অনাগ্রহ দেখাতে পারে।

এই মতবিরোধ দেশের রাজনীতিতে নতুন উত্তাপ তৈরি করেছে। একদিকে বিএনপি ভোট-পরবর্তী সংসদকে গুরুত্ব দিচ্ছে, অন্যদিকে জামায়াত-এনসিপি দ্রুত পদক্ষেপের জন্য চাপ দিচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি এই মতপার্থক্য নিরসন না হয় তবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ঘোষিত জুলাই সনদ রাজনৈতিক বিভাজন কমানোর বদলে নতুন বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে।

এখন রাজনৈতিক অঙ্গনের সবার চোখ কমিশনের ওপর। তারা কীভাবে দলগুলোর মধ্যে ভারসাম্য তৈরি করে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হবে, সেটিই নির্ধারণ করবে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের গতি ও দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ।

Комментариев нет