মিটফোর্ডে ব্যবসায়ীকে পাথর মেরে হত্যার ঘটনায় তোলপাড় সারাদেশ। এরই মাঝে এনসিপি আহ্বায়ক হাসনাত বললেন, “ছাত্ররা ঘরে ফিরে যায়নি, জুলাই শেষ হয়নি”— যা নতুন ইঙ্গিত দিচ্ছে রাজনৈতিক অস্থিরতার।
ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে প্রকাশ্যে দিবালোকে এক ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে ও পাথর মেরে হত্যা করার ঘটনাটি যেন দেশের বিবেককে কাঁপিয়ে দিয়েছে। এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হতেই দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও মানবাধিকার সংগঠন ঘটনার দ্রুত বিচার দাবি করেছে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ একটি ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন, যা নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
হাসনাত আব্দুল্লাহ শুক্রবার (১১ জুলাই) রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে লিখেন, “ছাত্ররা ঘরে ফিরে যায়নি। জুলাই শেষ হয়নি।” ছোট একটি বাক্যে বলা এই বক্তব্য দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। কারণ, এটি শুধু মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড ঘিরেই নয়, বরং চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ছাত্র আন্দোলনের ভবিষ্যৎ গতিপথ সম্পর্কেও বার্তা দিচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
এর আগে, ৯ জুলাই বুধবার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ব্যস্ত সড়কে এক নির্মম ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় উঠে আসে, কয়েকজন যুবক একটি মোটরসাইকেল আরোহীকে রাস্তায় থামিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করে। একপর্যায়ে তারা পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করে এবং ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। নিহত ব্যক্তির নাম প্রকাশ না করলেও জানা গেছে, তিনি স্থানীয় একজন ব্যবসায়ী ছিলেন।
এই ঘটনায় রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, ঢাকা মহানগর যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কয়েকজন নেতাকর্মী চাঁদাবাজির সাথে জড়িত এবং এর বিরোধের জের ধরেই ঘটনাটি ঘটেছে। যদিও অভিযুক্তদের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
মিটফোর্ডে দিনের আলোতে এমন ভয়ানক খুনের ঘটনা শুধু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দুর্বলতা নয়, বরং এটি সমাজে রাজনৈতিক হিংসার নগ্ন প্রতিচ্ছবিও বটে। ঘটনাটি নিয়ে সাধারণ মানুষ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ও রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। “এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড” — এমন মন্তব্যও পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে।
এই প্রেক্ষাপটে এনসিপি নেতা হাসনাতের "ছাত্ররা ঘরে ফেরেনি, জুলাই শেষ হয়নি" বক্তব্যটি একটি তাৎপর্যপূর্ণ রাজনৈতিক বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে। জুলাই মাসের শুরু থেকেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরকারবিরোধী আন্দোলনের ডাক এসেছে। এই আন্দোলনে ছাত্রদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য। ফলে হাসনাতের এই বক্তব্যকে শুধুই আবেগপ্রবণ বলা যাচ্ছে না, বরং এটি ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিস্থিতির এক ধরনের ইঙ্গিত বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তবে সরকারপক্ষ এই মন্তব্যকে রাজনৈতিক উসকানি হিসেবে দেখছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে যে, অপরাধীদের গ্রেপ্তারে জোর তৎপরতা চলছে এবং খুব শিগগিরই দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
এদিকে, নিহত ব্যক্তির পরিবার ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে। তারা অভিযোগ করেছেন, এলাকায় নিয়মিত চাঁদাবাজি চলে এবং প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব ঘটনা ঘটলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।
এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করল, রাজধানীর বুকে আইনশৃঙ্খলার অবনতি কতটা ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। যদি দ্রুত বিচার না হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের আস্থা হারিয়ে যাবে আইন ও প্রশাসনের ওপর থেকে। এখন পুরো জাতি তাকিয়ে আছে—এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচার আদৌ হবে কি না, এবং রাজনীতি কি আবারও সহিংসতার পথে ফিরছে?