জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের জন্য ২৬০০ ফ্ল্যাট: মিরপুর থেকে শুরু দেশের সর্বত্র..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
আসছে দেশের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পুনর্বাসনে রাজধানীর মিরপুরে নির্মিত হবে ২৬০০ ফ্ল্যাট। এ প্রকল্পের পরিধি বাড়িয়ে সারা দেশেই বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।..

জুলাই মাসে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবারগুলোর জীবনমান উন্নয়ন ও পুনর্বাসনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ রাজধানীর মিরপুরে নির্মাণ করতে যাচ্ছে ২৬০০ আবাসিক ফ্ল্যাট। প্রায় ২ হাজার ৮০৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হতে যাওয়া এই প্রকল্পটি বর্তমান সরকারের অন্যতম বৃহৎ পুনর্বাসন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী সাধারণ মানুষের পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানো। এই আন্দোলনে নিহত প্রায় দেড় হাজার মানুষের পরিবার এবং আহত অনেকেই আজও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি। কেউ কেউ চিকিৎসা নিচ্ছেন বিদেশে, কেউবা দেশে থেকে লড়ছেন জীবনের সঙ্গে। তাদের অনেকেই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্য হারিয়েছেন। ফলে এসব পরিবার এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

এই প্রেক্ষাপটে, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ দুই ধাপে দুটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। প্রথম প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে মিরপুর সেকশন ৯-এ, যেখানে ১৫টি ভবনে মোট ১ হাজার ৫৬০টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি ফ্ল্যাটের আয়তন হবে এক হাজার বর্গফুট। এই অংশের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা। দ্বিতীয় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে মিরপুর সেকশন ১৬-এ, যেখানে আরও ১ হাজার ৪০টি ফ্ল্যাট নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৯৮ কোটি টাকা।

জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রয়োজনীয় জমি পাওয়া গেলে আরও দুটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে। মিরপুর ছাড়াও রংপুরে সরকারি খাসজমিতে একই ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাব রয়েছে। রংপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের কর্মচারীদের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণের পাশাপাশি, জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবারের জন্যও ফ্ল্যাট নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

এই বিষয়ে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. নুরুল বাসির বলেন, “প্রকল্পের নথিপত্র প্রস্তুতের কাজ চলছে। আগামীকাল (মঙ্গলবার) গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সভা রয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে জুন মাসের পর থেকেই প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান ও নির্মাণকাজ শুরু হবে।”

অন্যদিকে, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য (ভূমি ও সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা) এস এম সোহরাব হোসেন বলেন, “এই প্রকল্পটি শহীদ ও আহত পরিবারগুলোর জন্য সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ফ্ল্যাট প্রদানের উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে। সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়িত হবে এটি। প্রাথমিকভাবে ঢাকায় শুরু হলেও পর্যায়ক্রমে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরকারিভাবে খাসজমি বরাদ্দ দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে।”

এদিকে, রংপুর জেলার দিনাজপুর হাউজিং এস্টেটে আগে থেকেই নির্মিত দুটি ১০তলা ভবনে ৭২টি ফ্ল্যাট রয়েছে, যেখানে বর্তমানে বরাদ্দপ্রাপ্তরা বসবাস করছেন। একই স্থানে আরও দুটি ভবন নির্মাণের জায়গা রয়েছে। কর্তৃপক্ষের মতে, এই দুটি ভবনে আরও ৭২টি ফ্ল্যাট এবং ১০টি গ্যারেজ নির্মাণ করা সম্ভব হবে।

এ সংক্রান্ত বিষয়ে চিঠি চালাচালিও ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। আগামীকাল মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ সভা অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে প্রকল্পটির বাস্তবায়নের বিষয়ে চূড়ান্ত আলোচনা হবে।

এর আগে, ২১ আগস্ট ২০০৪ সালের গ্রেনেড হামলায় আহত ও নিহতদের পরিবারের জন্যও মিরপুর ১৫ নম্বর সেকশনে ১০০টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হয়েছিল। একই প্রক্রিয়ায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের পুনর্বাসনের পথও উন্মুক্ত হচ্ছে এই নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে।

সব মিলিয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে একদিকে যেমন শহীদ ও আহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো হবে, তেমনি রাষ্ট্রীয়ভাবে একটি মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হবে—যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

No comments found