জুলাই আন্দোলনকে গ্যাং কালচার’ বলে ভারতীয় ভিডিও ছড়াচ্ছে আ.লীগ সমর্থকরা..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ভারতের পুরোনো ভিডিও ছড়িয়ে ‘জুলাই গ্যাং কালচার’ বানিয়ে মিথ্যা প্রচার করছে আওয়ামী লীগপন্থীরা—এমন অভিযোগ তুলেছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। ঘটনা ভারতের হলেও চালানো হচ্ছে বাংলাদেশের নামে।..

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ঘিরে তৈরি হয়েছে ব্যাপক বিভ্রান্তি। ভিডিওটি ছড়িয়ে দাবি করা হচ্ছে—বাংলাদেশে ছাত্রদের মাঝে ‘জুলাই গ্যাং কালচার’ নামের ভয়ংকর সহিংসতা শুরু হয়েছে। কিন্তু তদন্তে বেরিয়ে এসেছে একেবারে ভিন্ন ও বিস্ময়কর এক সত্য।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং-এর দাবি, ভিডিওটি বাংলাদেশের নয়, বরং এটি ভারতের কেরালায় ঘটে যাওয়া একটি পুরোনো ছাত্র সংঘর্ষের দৃশ্য, যেটিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বাংলাদেশে ‘জুলাই গ্যাং কালচার’ নামে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা।

রোববার (২৯ জুন) রাতে প্রধান উপদেষ্টার অফিসের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ ‘C.A. প্রেস উইং ফ্যাক্টস’-এ এক অফিশিয়াল বিবৃতিতে বলা হয়, “আওয়ামী লীগ সমর্থকরা একটি পুরোনো ভারতীয় ভিডিও ভাইরাল করে ‘জুলাই গ্যাং কালচার’ নামে গুজব ছড়াচ্ছে। এটি একটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন প্রচারণা।”

ভিডিওতে দেখা যায়—স্কুল ড্রেস পরা একদল কিশোর মারামারিতে জড়িয়েছে। একে অপরকে থাপ্পড় ও লাথি মারছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভ্রান্তিকরভাবে পোস্ট করে অনেকেই এই দৃশ্যকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে মিলিয়ে ভয়ভীতির পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, অনুসন্ধানে জানা গেছে ভিডিওটি প্রথম আপলোড করে “DBC হিন্দি” নামের একটি ভারতীয় ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট। তাদের পোস্ট অনুযায়ী, ভিডিওটি ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখের এবং ঘটনাটি কেরালার। ইনস্টাগ্রামের ভিডিওর বর্ণনাতেও এটি স্পষ্টভাবে লেখা ছিল যে এটি কেরালার দুই ছাত্র গ্যাং-এর সংঘর্ষ।

এই ভিডিওটি পরে ভারতের জাতীয় ইংরেজি সংবাদমাধ্যম টাইমস নাও-এর ওয়েবসাইটেও প্রকাশিত হয়। তাদের শিরোনাম ছিল—“কেরালার রাস্তায় ছাত্রদের হতবাক করা মারামারির ভিডিও ভাইরাল। দেখুন।” টাইমস নাওয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই ঘটনায় ২০ জন ছাত্র জড়িত ছিল, যাদের মধ্যে ২ জন গুরুতর আহত হয়।

এছাড়া, ওই প্রতিবেদনে কেরালার কোন অংশে ঘটনাটি ঘটেছে তা নির্দিষ্টভাবে বলা না হলেও, কোথাও বাংলাদেশের নাম বা অংশগ্রহণের কোনো প্রমাণ নেই।

প্রেস উইংয়ের বক্তব্য অনুযায়ী, মূলত জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ানো এবং চলমান ছাত্র আন্দোলন বা রাজনৈতিক অস্থিরতার সঙ্গে জনগণের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতেই এই ধরনের মিথ্যা ভিডিও চালানো হচ্ছে।

বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, “এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং পরিকল্পিত প্রচারাভিযানের অংশ। সরকার সমর্থক কিছু ব্যক্তি বা গ্রুপ পুরোনো ভিডিও বা ভুয়া কনটেন্ট ছড়িয়ে প্রকৃত ঘটনার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের চেষ্টা করছে।”

উল্লেখ্য, “জুলাই আন্দোলন” নামে একটি রাজনৈতিক তরঙ্গ নিয়ে সম্প্রতি ছাত্র-যুব সমাজে জোরালো আন্দোলন শুরু হয়েছে। এই আন্দোলনকে দমন করতে নানা অপপ্রচার ও বিভ্রান্তিমূলক ক্যাম্পেইন চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।

‘জুলাই গ্যাং কালচার’ কথাটি ব্যবহার করে ভারতের ছাত্রদের পুরোনো মারামারির ভিডিওকে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে চালিয়ে দেওয়া এই প্রচারণা সেই একই প্রোপাগান্ডার ধারাবাহিক অংশ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

প্রেস উইং তাদের বিবৃতির শেষে নাগরিকদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলে, “যে কোনো ভিডিও বা খবর শেয়ার করার আগে ভালোভাবে যাচাই করুন। বিভ্রান্তিমূলক প্রচার বা ভুয়া তথ্য ছড়ালে দেশ ও সমাজ দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিক স্বার্থে ভুয়া ভিডিও ছড়িয়ে জনমনে ভীতির পরিবেশ তৈরি করা অত্যন্ত বিপজ্জনক। এটি ভবিষ্যতে নাগরিকদের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং সামাজিক অস্থিরতা আরও বাড়াতে পারে।

পুরোনো ভারতীয় একটি ভিডিওকে ভিত্তি করে ‘জুলাই গ্যাং কালচার’ বানিয়ে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক আন্দোলনের চরিত্র হননের চেষ্টা যে কোনো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্যই হুমকিস্বরূপ। জনগণকে সচেতন থাকতে হবে, যাতে সত্য-মিথ্যার মাঝে পার্থক্য করতে পারে এবং কারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তথ্য বিকৃতি ঘটাচ্ছে তা শনাক্ত করতে পারে।

Walang nakitang komento


News Card Generator