যুক্তরাষ্ট্র-ইরান আলোচনার আগেই তেহরানে বো মা ব র্ষ ণ, নিহত বিজ্ঞানী ও সামরিক কর্মকর্তারা — ভেঙে পড়ছে শান্তির আশা..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
যেখানে কূটনীতি দিয়ে উত্তেজনা কমানোর আশা ছিল, সেখানে আগুন দিয়ে শুরু হলো নতুন অধ্যায়। যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের পারমাণবিক আলোচনার মাত্র একদিন আগে ইসরায়েল ইরানে চালালো ভয়াবহ বিমান হামলা। এতে নিহত হলেন সামরিক..

তেহরানের আকাশে ২০০ বোমার আগুন: রক্তমাখা আলোচনার প্রাক্কালে ইসরায়েলি আগ্রাসন

শুক্রবারের ভোর ছিল ইরানের জন্য এক বিভীষিকাময় সকাল। ২০০টিরও বেশি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান আঘাত হানে ইরানের বিভিন্ন স্থানে—বিশেষত পারমাণবিক গবেষণা ও সামরিক স্থাপনাগুলোর ওপর। রাষ্ট্রীয় মিডিয়া জানিয়েছে, রাজধানী তেহরানে আবাসিক ভবনেও হামলা হয়েছে। প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত তিনজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা, কয়েকজন পারমাণবিক বিজ্ঞানী এবং বহু নারী-শিশু।

আহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৯৫, যারা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঘটনাস্থল থেকে উঠে এসেছে আগুন, ধ্বংসস্তূপ ও কান্নার দৃশ্য।


আলোচনার টেবিল নয়, বোমার ধোঁয়া: ইসরায়েলের চরম বার্তা

এই হামলার সময়সূচি নিয়েই শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষণ। কারণ, মাত্র একদিন পর রবিবার ওমানে হওয়ার কথা ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যকার ষষ্ঠ দফার পরোক্ষ পারমাণবিক আলোচনা।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচির মধ্যে সম্ভাব্য ঐতিহাসিক সমঝোতার আশা করা হচ্ছিল। কিন্তু হামলার ফলে এই আলোচনা আজ চরম অনিশ্চয়তায়। অনেকেই মনে করছেন, ইসরায়েল এ হামলার মাধ্যমে কেবল আলোচনা নস্যাৎ নয়, বরং কূটনৈতিক সম্পর্ক ধ্বংস করতেই মরিয়া।


বিশ্লেষকদের চোখে: ‘এটি যুদ্ধের ঘোষণার শামিল’

ডিবা মিরজায়ি, জার্মান ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল অ্যান্ড এরিয়া স্টাডিজ-এর বিশ্লেষক বলেন,

“এটা কাকতালীয় নয়। ইসরায়েল আলোচনার ক্ষণকে বেছে নিয়েছে যেন ইরান আর কূটনীতি বিশ্বাস না করে।”

অন্যদিকে লন্ডনের এসওএএস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ আলী আলাভি বলেন,

“এই সরাসরি হামলা ৮০’র দশকের পর ইরানে প্রথম। এর কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া হবে প্রবল।"

তিনি আরও জানান, আলোচনার অন্যতম মূল ব্যক্তিত্ব আলি শামখানি, আয়াতোল্লাহ খামেনির উপদেষ্টা, হয়তো নিহত হয়েছেন বা গুরুতর আহত। এটি আলোচনা প্রক্রিয়ায় বিশাল ধাক্কা।


ট্রাম্পের অবস্থান: কথায় সংযম, কাজে বিপরীত সুর

হামলার পূর্ব মুহূর্তে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছিলেন,

“আমরা চুক্তির খুব কাছাকাছি। আমি চাই না ইসরায়েল এগিয়ে যাক।”

তবে হামলার কয়েক ঘণ্টা পর, ট্রাম্প Truth Social-এ পাল্টা ভঙ্গিতে লেখেন,

“ইরান সময় পেয়েছিল, চুক্তি করতে ব্যর্থ হয়েছে। এখনো সময় আছে। না করলে—সব শেষ হয়ে যাবে।”

তিনি আরও দাবি করেন, ইরানকে ৬০ দিনের আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছিল এবং আজ ছিল সেই সময়সীমার ৬১তম দিন। ইঙ্গিত মিলেছে, হামলার পূর্ব প্রস্তুতি অনেক আগে থেকেই চলছিল।


ইরানের প্রতিক্রিয়া: ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রে জবাব, নতুন উত্তেজনার শুরু?

শুক্রবার রাতেই ইরান একাধিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে, যার ফলে ইসরায়েলে প্রায় ৮০ জন আহত হয়। তাদের মধ্যে তিনজন মারা গেছেন। ফলে মধ্যপ্রাচ্যে ফের বড় যুদ্ধের আশঙ্কা জেগেছে।

আন্তর্জাতিক পারমাণবিক সংস্থা (IAEA) ইরানের বিরুদ্ধে সম্প্রতি তিরস্কারমূলক বিবৃতি দিয়েছিল, যেখানে জানানো হয় ইরান শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক ব্যবহারের ক্ষেত্রেও দায়িত্ব পালন করছে না। জবাবে তেহরান ঘোষণা দেয়, তারা একটি ‘নিরাপদ স্থানে’ নতুন ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধিকরণ কেন্দ্র স্থাপন করবে।


বিশ্ব এক অদৃশ্য আগুনের সামনে

বিশ্ববাসী আবারো ফিরে এসেছে সেই পুরনো আতঙ্কে—ইরান-যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনা, ইসরায়েলের হামলা, আর শান্তির আলোচনার ভগ্নাংশ।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি রবিবারের আলোচনা বাতিল হয়, তবে এটাই হবে পারমাণবিক উত্তেজনার এক নতুন যুগের সূচনা।


শেষ কথা:
ইসরায়েলের এই হামলা নিঃসন্দেহে শুধু এক রাতের অভিযান নয়। এটি বহুদিনের পরিকল্পনা, যার মূল লক্ষ্য কূটনৈতিক পরিসর সংকুচিত করে দেওয়া। এখন দেখার পালা—এই আগুনে শান্তি পুড়বে, না কি এই ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকেই উঠে আসবে নতুন আলোচনার সম্ভাবনা?

Ingen kommentarer fundet