close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

যুবলীগ নেতার স্ত্রীর ফ্ল্যাট দখলে, আওয়ামী পলাতক নেতাকে ‘পুনর্বাসন’ করলেন এনসিপি সংগঠক!..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
নওগাঁয় যুবলীগ নেতার স্ত্রীর ফ্ল্যাট দখল করে পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাকে আশ্রয় দিয়েছেন এনসিপির শীর্ষ সংগঠক ইমরুল আখিয়ার পরাগ। এ ঘটনায় এনসিপির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে উঠছে প্রশ্ন, সৃষ্টি হয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরত..

নওগাঁ জেলার রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে উত্তেজনা ও বিতর্ক। সদ্য আত্মপ্রকাশ করা জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এখনো সেখানে কোনো আনুষ্ঠানিক কমিটি ঘোষণা না করলেও দলটির হয়ে সক্রিয় রয়েছেন শহরের মেরিগোল্ড পাড়ার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী ইমরুল আখিয়ার পরাগ। দলের পরবর্তী জেলা সভাপতি হিসেবে তার নাম আলোচনায় থাকলেও, তিনি জড়িয়েছেন এক মারাত্মক বিতর্কে—যুবলীগ নেতার স্ত্রীর ফ্ল্যাট দখলের অভিযোগ এবং পলাতক এক আওয়ামী লীগ নেতাকে আশ্রয় দেওয়ার ঘটনা।

স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী সূত্র জানায়, পরাগের বড় ভাই শাহরিয়ার পারভেজ একজন আবাসন ব্যবসায়ী। ভাইয়ের ব্যবসা দেখাশোনার সুবাদে পরাগের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সখ্যতা রয়েছে। ২০২৩ সালের ৬ মার্চ পার নওগাঁর স্টেডিয়াম পাড়ায় নির্মিত সাততলা ভবনের ১২৫০ বর্গফুট আয়তনের একটি ফ্ল্যাট (৬/বি) কিনেছিলেন নওগাঁ জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বিমান কুমার রায়ের স্ত্রী ববি রায়। পরবর্তীতে তারা সপরিবারে ওই ফ্ল্যাটে বসবাস শুরু করেন।

কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে’ সরকার পতনের পর থেকে বিমান কুমার রায় আত্মগোপনে চলে গেলে, ফাঁকা ফ্ল্যাটটি হয়ে ওঠে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু। অভিযোগ উঠেছে, এই সুযোগে পরাগ ফ্ল্যাটটিতে একাধিকবার লুটপাট চালান এবং পরবর্তীতে সেখানে পলাতক আওয়ামী লীগ নেতা ছবেদুল ইসলাম রনিকে পুনর্বাসন করেন। রনি, যিনি পত্নীতলা-ধামইরহাট আসনের সাবেক এমপি শহিদুজ্জামান সরকারের ঘনিষ্ঠ, তার বিরুদ্ধে রয়েছে ৫০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ।

এনসিপির এক স্থানীয় সংগঠক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “জুলাই বিপ্লবের পর পলাতক আওয়ামী নেতারা ফের মাঠে ফেরার চেষ্টা করছেন। পরাগ এই সময়ে রনিকে ফ্ল্যাটে নিরাপদ আশ্রয় দিয়ে, কার্যত পুনর্বাসন করেছেন। এটি শুধু এনসিপির ভাবমূর্তি নষ্ট করছে না, বরং পুরো আন্দোলনকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে।”

রনির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে, তার ব্যবহৃত নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়, ফলে তার বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।

অপরদিকে যুবলীগ নেতা বিমানের স্ত্রী ববি রায় অভিযোগ করেন, “এই ফ্ল্যাটটি আমি ২৫ লাখ টাকায় কিনেছি। ভেতরে অন্তত সাত লাখ টাকার ফার্নিচার ছিল, সবই লুট করেছে পরাগ। এখন সে বলছে, এটি নাকি রনির মালিকানাধীন। এমনকি রনিকে বাদী করে মিথ্যা মামলাও করেছে। অথচ টাকা পরাগ নিজ হাতে নিয়েছে—সেটার প্রমাণ আমার কাছে আছে।”

এনসিপির সমন্বয়ক ফজলে রাব্বী বলেন, “আওয়ামী লীগ নেতাকে ‘বিএনপি পরিচয়’ দিয়ে থানায় তদবির করে মিথ্যা মামলা করা এবং ফ্ল্যাট দখলের অভিযোগে দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এই দল থেকে দখলদার বা আওয়ামী পুনর্বাসনকারী কাউকে নেতৃত্বে আনা হবে না।”

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে পরাগ দাবি করেন, “ছবেদুল ইসলাম রনি একজন ইট সরবরাহকারী ছিলেন। আমাদের ভবনে ইট দিয়েছিল, সেই সুবাদে তাকে একটি ফ্ল্যাট দেওয়ার চুক্তি হয়েছিল। রনি তার ফ্ল্যাট বুঝে নিয়েছেন, এতে আমার কোনো ব্যক্তিগত লাভ নেই।” তিনি আরও বলেন, “এসব রাজনৈতিক অপপ্রচার, আমাকে এনসিপির জেলা নেতৃত্ব থেকে সরাতে একটি মহলের কুচক্রী চেষ্টা।”

এদিকে এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন বলেন, “আমরা এমন কাউকে দলের নেতৃত্বে আনতে চাই না, যিনি আওয়ামী লীগের দখল ও পুনর্বাসনের মতো অপকর্মে জড়িত। অভিযোগের সত্যতা পেলে পরাগকে দল থেকে সম্পূর্ণরূপে বাদ দেওয়া হবে।”

নওগাঁয় এনসিপির একটি সম্ভাবনাময় নেতৃত্ব ঘিরে যে বিতর্ক দেখা দিয়েছে, তা শুধু একটি দলের অভ্যন্তরীণ সংকট নয়, বরং সামগ্রিক রাজনৈতিক জোট ও নতুন দলগুলোর গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে।
যুবলীগ নেতার স্ত্রীর ফ্ল্যাট দখল করে পলাতক আওয়ামী নেতাকে পুনর্বাসনের এই ঘটনাটি যেন হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতার আরেক করুণ প্রতিচ্ছবি।

没有找到评论