টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে প্রশাসনের ছত্রচ্ছায়ায় জুয়ার বোর্ড বসানোর অডিও ফাঁসের পর আলোচিত সেই বিএনপি নেতা লাল মামুদ খান ওরফে লাল খাঁ এবার চাঁদাবাজি ও হামলার অভিযোগে নতুন করে বিতর্কে জড়িয়েছেন। যুবদলের সম্পাদকের কাছে ৬ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করেন এবং তাকে হাতুড়িপেটা করে তার কাছে থাকা ৫ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে লাল খার বিরুদ্ধে।
রবিবার (৪মে) সন্ধায় উপজেলার বামনহাটা বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত লাল মামুদ খাঁন ওরফে লাল খাঁ পৌর বিএনপির যুগ্ন সম্পাদক এবং ভুক্তভোগী ফারুক হোসেন ৬ নং ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক পদে দ্বায়িত্বে রয়েছেন।
ভুক্তভোগী যুবদল নেতা ফারুকের ভাই মেহেদী হাসান বলেন, আমার ভাই ফারুক হোসেন ঠিকাদারী ব্যবসা করে। হঠাৎ করে লাল খা আমার ভাইয়ের কাছে একটি কাজ বাবদ ৬ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করেন। জবাবে আমার ভাই তাকে বলেন, কাজে এমনিতেই লোকসান যাবে, আমি আপনাকে ৬ লাখ টাকা দিলেতো আরো লোকসানে পরতে হবে। এর থেকে আপনি কাজই নিয়ে নেন। তখন লাল খা আমার ভাই ফারুক হোসেন কে হুমকি দিয়ে বলেন, তুই কাজ করলেও ৬ লাখ টাকা দিতে হবে না করলেও দিতে হবে। অন্যথায় তোর হাত পা ভাংমু।
পরে গতকাল ৪ ঠা মে সন্ধার সময় ফারুক ভাই রড কেনার জন্য ৫ লাখ টাকা নিয়ে যাওয়ার সময় বামনহাটা বাজার এলাকায় পৌছানোর পর পরিকল্পিত ভাবে লাল খাঁর নেতৃত্বে, তার ভাই ও ছেলে আমার ভাইয়ের উপর আক্রমন করে। এ সময় তাকে হাতুড়ি দিয়ে বেধরক পিটিয়ে ৫ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়। ফারুক হোসেনের অবস্থা ঝুকিপূর্ণ হওয়ায় অতি দ্রুত তাকে ভূঞাপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
অতপর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করি। বর্তমানে ফারুক ভাই ভূঞাপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার মাথায় প্রচন্ড আঘাত লেগেছে তাই চিকিৎসক অতিদ্রুত তাকে সিটিস্ক্যান করার পরামর্শ দেন। ভুক্তভোগীর চাচা এবং পরিবারের সদস্যরা এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত লাল খাঁ জানান, ঘটনার সময় আমি ভূঞাপুরে ছিলাম। হঠাৎ খবর পেলাম, আমার ছেলেকে মারতেছে। তখন ভ্যানগাড়ি নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌছানোর পর জনতে পারলাম, আমার ছেলেকে মেরে ১০ লাখ টাকা নিয়ে গেছে।
চাঁদাবাজির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার নাম দিয়ে ফেক আইডি খুলে চাঁদা দাবী করে। এর সাথে আমি সম্পৃক্ত নই।
এ বিষয়ে থানার ওসি এ কে এম রেজাউল করিম জানান, অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব হোসেন কফিল বলেন, দলের মানুষ যদি দলের মানুষের কাছে সুরক্ষিত না থাকে তাহলে সাধারন মানুষ তাদের কাছে আরো অনিরাপদ। আমি চাই না এ ধরনের বিএনপি আমাদের দলে থাকুক। আমাদের দলসহ সাধারণ মানুষ যেখানে নিরাপদ থাকবে, যেই নেতৃত্বের কাছে নিরাপদ থাকবে তারাই আমাদের দল করার সুযোগ পাবে। আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সেলিমুজ্জামান তালুকদার সেলু বলেন, আমাদের দলের সদস্য বা সদস্যদের প্রতি যদি এ ধরনের অন্যায় কাজ করে থাকে, বিশেষ করে চাদাবাজির মত ঘটনা ঘটলে তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে। দল চাঁদাবাজির বিরুদ্দে সোচ্চার, দলে চাদাবাজের স্থান দেয়ার কোন সুযোগ নাই। এ ঘটনায় যেহেতু মামলা হয়েছে, সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে যেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়। পৌর বিএনপির সভাপতি সম্পাদকের কাছেও বলব, তার বিরুদ্ধে যেন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়।
উল্লেখ্য, লাল খাঁ দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক পরিচয়ের অপব্যবহার করে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছেন দাবী করেন অনেকেই।
এর আগেও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে লাল খাঁর বিরুদ্ধে প্রশাসনের সহায়তায় জুয়ার বোর্ড পরিচালনার অভিযোগ উঠে আসে। ওই ঘটনায় তার একটি হুমকির অডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। সেই ঘটনায় পৌর বিএনপি তাকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নিলেও এখনো বহিষ্কার করা হয় নি।