ফিলিস্তিনের গাজার খান ইউনিসে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ইসরায়েলের সাত সেনা নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আইডিএফ বুধবার (২৫ জুন) সকালে এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে। নিহতদের মধ্যে ছয়জনের নাম প্রকাশ করা হয়েছে, যাঁরা সবাই ইসরায়েলি কমব্যাট ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পসের সদস্য ছিলেন। এই হামলার পর পুরো গাজা-ইসরায়েল সীমান্তে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে এবং সম্ভাব্য পাল্টা অভিযানের হুমকি দিয়েছে ইসরায়েল।
এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে মঙ্গলবার (২৪ জুন) সন্ধ্যায় স্থানীয় সময় ঠিক সাড়ে ৬টার দিকে। গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসে দায়িত্ব পালন করছিল ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ কমব্যাট ইউনিট। সেনাদের বহনকারী একটি ‘পুমা’ সাঁজোয়া পার্সোনেল ক্যারিয়ার (এপিসি)-তে হঠাৎ করে ঘটে যায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ। পরে তদন্তে জানা যায়, এটি ছিল একটি সুপরিকল্পিত আত্মঘাতী হামলা।
আইডিএফ-এর দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, পুমা গাড়িটিতে বিস্ফোরক ডিভাইস স্থাপন করে সেটি বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতে গাড়িটিতে দাউ দাউ করে আগুন ধরে যায়। দ্রুত সাড়া দেয় আশপাশে অবস্থানরত ইসরায়েলি সেনারা এবং একটি বুলডোজারের সহায়তায় গাড়িটিকে বালু দিয়ে ঢেকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করা হয়।
নিহত সেনারা হলেন:
-
লেফটেন্যান্ট মাতান শাই ইয়াশিনভস্কি
-
স্টাফ সার্জেন্ট রোনেল বেন-মোশে
-
স্টাফ সার্জেন্ট নিভ রাডিয়া
-
সার্জেন্ট রোনেন শাপিরো
-
সার্জেন্ট শাহার মানোয়াভ
-
সার্জেন্ট মায়ান বারুচ পার্লস্টেইন
এছাড়াও একজন সেনার নাম এখনও প্রকাশ করা হয়নি।
প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে, একজন ফিলিস্তিনি আত্মঘাতী হামলাকারী খুব কাছ থেকে এপিসির দিকে দ্রুত অগ্রসর হয়ে বিস্ফোরণ ঘটান। এটি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর জন্য এক ভয়ানক চ্যালেঞ্জ। কারণ, কমব্যাট ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পসের ৬০৫তম ব্যাটালিয়ন সাধারণত ফ্রন্টলাইনে থেকে মাইন ও বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয় করার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকে। ফলে, এদের এমনভাবে একসঙ্গে হারানো ইসরায়েলের জন্য এক বড় ধাক্কা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এদিন খান ইউনিসে দ্বিতীয় হামলার ঘটনাও ঘটে। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ৫১তম ব্যাটালিয়নের ওপর হামাসের যোদ্ধারা ট্যাঙ্কবিধ্বংসী গোলাবারুদ (anti-tank munition) দিয়ে হামলা চালায়। এতে দুজন সেনা আহত হন। আহতদের মধ্যে একজন গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, অপরজন সামান্য আঘাত পেয়েছেন।
ঘটনার পরপরই আইডিএফ জানায়, হামলাকারীদের শনাক্ত করার কাজ চলছে এবং এই হামলার কঠোর জবাব দেওয়া হবে। সেনাবাহিনীর মুখপাত্র বলেন,আমরা কাউকে ছাড় দেব না। হামলার তীব্রতা আরও বাড়বে। গাজায় আমাদের অভিযান আগের চেয়েও আরও জোরালো হবে।
ইসরায়েলি সেনাদের এত বড় সংখ্যায় প্রাণহানির ঘটনা গত কয়েক মাসে আর ঘটেনি। ফলে এই হামলা শুধু সামরিক নয়, রাজনৈতিকভাবেও ইসরায়েলকে নড়েচড়ে বসিয়েছে।
এই বিস্ফোরণ এবং সেনা হতাহতের ঘটনায় গাজার পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষ করে গাজা সিটি, রাফা ও খান ইউনিসে আরও বড় ধরনের সামরিক অভিযান চালাতে পারে আইডিএফ। অন্যদিকে হামাসও প্রতিশোধের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে গাজার ভেতরে এতসংখ্যক ইসরায়েলি সেনা নিহত হওয়ার ঘটনা নজিরবিহীন। পরিস্থিতি এখন কোনদিকে গড়াবে, সেটাই দেখার বিষয়। তবে কূটনৈতিক ও মানবিক মহলে শঙ্কা দেখা দিয়েছে—এই সংঘাত আরও রক্তক্ষয়ী পর্যায়ে গড়াতে পারে।



















