জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাম্বুলেন্স না থাকায় এক শিক্ষার্থীকে মোটরসাইকেলে হাসপাতালে নিতে হয়। ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা স্থায়ী অ্যাম্বুলেন্সের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন।
জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের একটি যৌক্তিক দাবি এবার রূপ নিয়েছে প্রতিবাদে। জরুরি চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো অ্যাম্বুলেন্স না থাকায় শিক্ষার্থীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, অসুস্থ শিক্ষার্থীকে মোটরসাইকেলে করেই হাসপাতালে নিতে হয়েছে—যা ঝুঁকিপূর্ণ ও অমানবিক।
সোমবার (৭ জুলাই) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে অংশ নিয়ে শিক্ষার্থীরা এই বাস্তব অভিজ্ঞতার বর্ণনা দেন এবং অবিলম্বে স্থায়ী অ্যাম্বুলেন্স সরবরাহের জোর দাবি জানান।
বক্তারা বলেন, কিছুদিন আগে এক শিক্ষার্থী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লেও সময়মতো কোনো পরিবহনের ব্যবস্থা পাওয়া যায়নি। ফলে গুরুতর অবস্থায় তাকে মোটরসাইকেলে করে নিয়ে যেতে হয় হাসপাতালে। এটি কেবল সেই শিক্ষার্থীর জন্য নয়, বরং পুরো বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারে নিরাপত্তাহীনতার এক নির্মম দৃষ্টান্ত।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দাবি করে, শিক্ষকদের জন্য বরাদ্দ একটি মাইক্রোবাস অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে ব্যবহারের জন্য রাখা হয়েছে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শুক্রবার ও শনিবার মাইক্রোবাসটি বন্ধ থাকে এবং প্রয়োজনের সময় এটি পাওয়া যায় না। এমনকি, ড্রাইভার অনেক সময় অনুপস্থিত থাকেন বা ‘উর্ধ্বতন অনুমতি’র কথা বলে দেরি করেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি আবাসিক হল রয়েছে। যদি রাতে কেউ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যায়, তাহলে জেলা শহরের হাসপাতালে যেতে হয় প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে। এতোটা দূরে অসুস্থ কাউকে নেওয়া একদিকে সময়সাপেক্ষ, অন্যদিকে বিপজ্জনক।”
একজন শিক্ষার্থী জানান, সম্প্রতি এক শিক্ষার্থী অসুস্থ হলে গাড়িচালককে ফোন দিলে তিনি বলেন ‘প্রথমে অনুমতি নিতে হবে’। পরে তিনি অনেক দেরিতে উপস্থিত হন। এই জটিলতা শিক্ষার্থীদের ক্ষোভে পরিণত করেছে।
তাই শিক্ষার্থীরা আগামী ৭ দিনের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ অ্যাম্বুলেন্স সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন। অন্যথায়, কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন। একইসঙ্গে তারা শিক্ষক মাইক্রোবাসকে অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে ব্যবহার করার প্রচেষ্টা বর্জনের ঘোষণা দেন।
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক লিটন আকন্দ বলেন, “৫ আগস্টের পর আমরা যে পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেছিলাম, তা ভেঙে গেছে। শিক্ষার্থীদের দেওয়া ৩২ দফা দাবি বাস্তবায়ন হয়নি। বরং প্রশাসন আগের ফ্যাসিস্ট কাঠামোকেই বহাল রেখেছে।” তিনি বলেন, “এই অমানবিক ব্যবস্থার যদি পরিবর্তন না হয়, তাহলে বড় ধরনের আন্দোলনের জন্য আমরা প্রস্তুত আছি।”
এছাড়াও মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সদস্যসচিব যীনাত মিয়া আজিজুল, শিক্ষার্থী রাফসান হামিদ রানা, কাজী মোহাম্মদ ইসমাইল প্রমুখ।
অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ নূর হোসেন চৌধুরী জানান, “গত অর্থবছরে অ্যাম্বুলেন্স কেনার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল, কিন্তু সরকারি অনুমোদন না থাকায় সেটি হয়নি। এবারও বাজেট পাঠানো হয়েছে। সরকার অনুমোদন দিলে আমরা দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স কিনব।”
শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী, অবিলম্বে অ্যাম্বুলেন্স সরবরাহ না হলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখন শিক্ষার্থীদের আস্থার পরীক্ষার মুখে।