রাজনৈতিক সুবিধার জন্য জরুরি অবস্থার অপব্যবহার রোধে সংবিধানের ১৪১ অনুচ্ছেদ সংশোধনে একমত হয়েছে সব রাজনৈতিক দল। কমিশনের প্রস্তাবে নাগরিক অধিকার রক্ষার বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক বিরল চিত্র দেখা গেছে—সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে একটি বিষয়ে: জরুরি অবস্থার রাজনৈতিক অপব্যবহার রোধ। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ এই ঐক্যমতের কথা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “রাজনৈতিক সুবিধার জন্য যেন কখনও আর জরুরি অবস্থার ঘোষণা ব্যবহার না হয়—এ বিষয়ে দ্বিতীয় পর্যায়ের সংলাপে সব দল একমত হয়েছে।” সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ১০ দিনের দীর্ঘ রাজনৈতিক সংলাপ শেষে এই মন্তব্য করেন তিনি।
এই সংলাপে অংশ নিয়েছিল দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, জরুরি অবস্থার বিধান পরিবর্তনের প্রস্তাবে আমরা একমত হয়েছি। তবে বিষয়টি নিয়ে জাতীয় সংসদে বিস্তারিত বিতর্ক হওয়া প্রয়োজন, কারণ এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু আইনি ও সাংবিধানিক দিক রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সংবিধানের ১৪১ অনুচ্ছেদ অতীতে এমনভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে, যাতে জনগণের অধিকার চরমভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে এবং আদালতের স্বাধীনতা পর্যন্ত বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এ অভিজ্ঞতা থেকেই সব পক্ষ একমত হয়েছে যে জরুরি অবস্থা যেন আর কখনও রাজনৈতিক হাতিয়ার না হয়।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে সংবিধানের ১৪১(ক), ১৪১(খ), এবং ১৪১(গ) অনুচ্ছেদ সংশোধনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বর্তমান বিধানে জরুরি অবস্থার সময় নাগরিকদের মৌলিক অধিকার ও আদালতের স্বাধীনতা কার্যত স্থগিত হয়ে যায়, যা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য উদ্বেগজনক।
কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী—
-
জরুরি অবস্থার মেয়াদ সর্বোচ্চ ৬০ দিন নির্ধারণ করা হবে।
-
এই সময়েও সংবিধানস্বীকৃত নাগরিক অধিকার যেমন: বাকস্বাধীনতা, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, এবং আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার অধিকার বাতিল বা স্থগিত করা যাবে না।
-
জরুরি অবস্থা জারি করতে হলে স্পষ্ট ও স্বচ্ছ আইন প্রণয়ন করতে হবে, যাতে নির্বাহী বিভাগের ইচ্ছামতো সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ না থাকে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। যদি বাস্তবে এই সংশোধন প্রক্রিয়া সংসদে গৃহীত হয়, তবে তা হবে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ইতিহাসে এক বড় অগ্রগতি।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সংবিধানের এই সংশোধনের মাধ্যমে শুধু রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাই নয়, সাধারণ জনগণের মৌলিক অধিকার সুরক্ষিত রাখা সম্ভব হবে, এমনকি সংকটকালেও।