close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

যৌন নিপীড়নের শিকার যশোর মেডিকেল কলেজে ছাত্রী

সুভাষ মজুমদার avatar   
সুভাষ মজুমদার
যশোর মেডিকেল কলেজের এক নারী শিক্ষার্থী যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।

যশোর মেডিকেল কলেজের এক নারী শিক্ষার্থী যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। কলেজেরই প্রশাসনিক শাখার প্রধান সহকারী আব্দুস সবুর খান এই কান্ড ঘটিয়েছেন। ঘটনাটি এক মাস আগে অর্থাৎ গত ৪ মে ঘটলেও গ্রামের কাগজের সাংবাদিকের কাছে তথ্যটি ফাঁস হয়েছে গতকাল ৪জুন বুধবার। ঘটনার তথ্যানুসন্ধানে পাওয়া গেছে ভয়ংকর তথ্য ও প্রমাণ। বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ঘটনা ধাপাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হলেও শেষ রক্ষা হয়নি। এতে করে মেডিকেল কলেজসহ স্বাস্থ্য বিভাগে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, গত ৪ মে দুপুর ২টার দিকে যশোর মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস কোর্সের ফাইনাল ইয়ারের এক নারী শিক্ষার্থী পরীক্ষার ফরম ফিলাপের জন্য প্রশাসনিক শাখার প্রধান সহকারী আব্দুস সবুরের দপ্তরে যান। ওই সময় কক্ষে আব্দুস সবুর খান ব্যতিত কোনো কর্মকর্তা কিংবা কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন না। নারী শিক্ষার্থীকে একা পেয়ে ফরম ফিলাপের নানা নিয়মকানুন শেখাতে থাকেন আব্দুস সবুর খান। এক পর্যায়ে কু-বাসনা জেগে ওঠে আব্দুস সবুরের। আচমকা ওই নারী শিক্ষার্থীকে ঝাপটে ধরেন। শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয়াসহ নানাভাবে যৌন নিপিড়ন করা হয়। এতে চরম বিব্রত হওয়াসহ বিমর্ষ হয়ে পড়েন ওই নারী শিক্ষার্থী। ফরম ফিলাপ না করেই চূড়ান্ত যৌন নির্যাতন থেকে রক্ষা পেতে ওই শিক্ষার্থী কৌশলে সবুরের কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসেন। তার সাথে আকষ্মিক ঘটে যাওয়া ভয়াবহতা সহপাঠিদের সাথে খুলে বলেন। তখনই বিচারের দাবিতে কলেজের সব ইয়ারের শিক্ষার্থীরা একাট্টা হন। যৌন নিপিড়ক আব্দুস সবুরের বিচার, মেডিকেল কলেজ থেকে বহিস্কার এবং চাকরি থেকে অব্যাহতির দাবিতে শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষের দপ্তরে হাজির হন।

অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাক্তার আবু হাসনাত মোঃ আহসান হাবীবের সাথে যৌন নিপীড়নের শিকার শিক্ষার্থী ও তার সহপাঠিরা ঘটনার পুরো ব্যাখ্যাসহ সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে প্রায় দু’ঘন্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা না নিলে কলেজ ক্যাম্পাসসহ পুরো যশোরে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি দেয়া হয়। এরই মধ্যে যৌন নিপীড়ক আব্দুস সবুর খান কলেজ ক্যাম্পাস থেকে সটকে পড়েন। ক্রমেই পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকে। উত্তপ্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে কলেজ অধ্যক্ষ তৎপর হন। যৌন নিপীড়নের শিকার শিক্ষার্থীর দেয়া লিখিত অভিযোগ আমলে নিয়ে ও অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তদন্ত সাপেক্ষে দোষী কর্মচারীর বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। একই সাথে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে আব্দুস সবুর খানকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর।এরপরই গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। প্যাথলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আজম সাকলায়েনকে প্রধান করে গঠিত কমিটিকে নির্দেশ দেয়া হয় অতিগুরুত্বের সাথে তদন্ত করে তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার। তদন্ত কমিটি গভীর পর্যবেক্ষণসহ অভিযোগকারী এবং অভিযুক্তের লিখিত বক্তব্য গ্রহণ করেছেন। একই সাথে অভিযুক্ত যৌন নিপীড়ক আব্দুস সবুর খান ওই নারী শিক্ষার্থীকে মোবাইলে কল করে তার কু-কর্মের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন সেই ভয়েস কল রেকর্ডও তদন্ত কমিটি সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করেছেন। চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন অধ্যক্ষের কাছে জমা দেয়া হয়েছে ৮ মে।
তদন্ত কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশে অপারগতার শর্তে নিশ্চিত করেছেন, অভিযোগকারী নারী শিক্ষার্থী যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। অভিযোগের প্রত্যেকটি বিষয় খতিয়ে দেখা হয়েছে। প্রশাসনিক শাখার প্রধান সহকারী আব্দুস সবুর খান ওই নারী শিক্ষার্থীকে যৌন নিপিড়ন করেছেন তা প্রমাণিত হয়েছে। তদন্ত কমিটি সুপারিশ করেছে যৌন নিপিড়নের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তিসহ যশোর মেডিকেল কলেজ থেকে আব্দুস সবুর খানকে অব্যাহতি দেয়ার।
এদিকে, একাধিক শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা অভিযোগ করছেন, আব্দুস সবুর খান এক যুগেরও বেশি মেডিকেল কলেজে চাকরিকালীন একাধিকবার অসৌজন্যতা করেছেন। পূর্বের অধ্যক্ষদের কাছে শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পায়নি। এতে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন আব্দুস সবুর খান। অসৌজন্য আচরণ এতোটাই তাকে দুঃসাহসী করে তুলেছে যে, ডাক্তার হতে যাওয়া একজন নারী শিক্ষার্থীকে অফিস কক্ষের মধ্যে যৌন নিপীড়ন করেছেন। মেডিকেল কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে আব্দুস সবুরের কৃতকর্মের জন্য কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে।
অভিযুক্ত আব্দুস সবুরের সাথে যোগাযোগ করা হলে প্রথম অবস্থায় তিনি কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। পরে কৌশলে বলার পর রাজি হন। তবে অভিযোগের সব বিষয়ে তিনি অস্বীকার করেন। তিনি দাবি করেন ষড়যন্ত্রের বলি হতে হচ্ছে তাকে। অপরাধ, অন্যায় না করলে অভিযোগকারী শিক্ষার্থীকে মোবাইলে কল করে ক্ষমা চাইলেন কেনো এমন প্রশ্ন করলে আব্দুস সবুর খান কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তিনি জোর গলায় বলেন, ঘটনাটি মেডিকেল কলেজের। আমার কর্তৃপক্ষ আছে, তারাই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। পত্রিকায় রিপোর্ট করার দরকার নেই। তিনি হুংকার দেন এবং চ্যালেঞ্জও ছুড়ে দিয়েছেন পত্রিকায় রিপোর্ট করলেও কিছু যায় আসে না।
সার্বিক বিষয়ে গ্রামের কাগজের সাংবাদিকের সাথে কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাক্তার আবু হাসনাত মোঃ আহসান হাবীব কথা বলেছেন। তিনি নিশ্চিত করেছেন একজন নারী শিক্ষার্থী প্রশাসনিক শাখার প্রধান সহকারীর দ্বারা যৌন নিপিড়নের শিকার হয়েছেন এমন একটি লিখিত অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

অভিযুক্ত কর্মচারীকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি ূদিয়ে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত কমিটি গঠন এবং তাদের কাছ থেকে সুপারিশকৃত দালিলিক প্রমাণসহ প্রতিবেদন পাওয়ার পর তা পর্যালোচনা করা হয়েছে। অভিযুক্ত ওই কর্মচারীকে যশোর মেডিকেল কলেজ থেকে প্রত্যাহারসহ প্রয়োজনীয় বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। অতিদ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত আছে।

没有找到评论