বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সমর্থকদের চোখ এখন এক ম্যাচের দিকে— হংকংয়ের বিপক্ষে আসন্ন ‘ডু অর ডাই’ লড়াই। আর এই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে দলের বড় তারকা হামজা চৌধুরী দিয়েছেন এক দৃঢ় বার্তা। ইংলিশ ক্লাব লেস্টার সিটির এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, মাঠে নামলে জয় নিয়েই ফিরতে চান তিনি। ঢাকায় পা রাখার পর থেকেই সমর্থকদের কাছ থেকে একটাই কথা শুনছেন হামজা— ‘হামজা ভাই, হংকংকে হারাতে হবে।’ সমর্থকদের এই প্রত্যাশার জবাবও দিয়েছেন তিনি, “ইনশাআল্লাহ আমরা জিতমু।”
বাংলাদেশে এটি হামজার তৃতীয় সফর। জাতীয় দলের সঙ্গে তার সম্পর্ক ও বোঝাপড়া এখন অনেক ভালো পর্যায়ে পৌঁছেছে। কোচিং স্টাফ ও সতীর্থদের সঙ্গে যোগাযোগ আরও শক্ত হয়েছে বলে জানান তিনি। “দলের সবাই কঠোর পরিশ্রম করছে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে। আমি দারুণ উপভোগ করছি। ইনশাআল্লাহ আমরা জিতব,” বললেন হামজা।
এই ম্যাচকে তিনি দেখছেন দলের জন্য ‘ডু অর ডাই’ হিসেবে। আত্মবিশ্বাসী এই মিডফিল্ডারের ভাষায়, “খুব চান্স আছে। আমি কোচের সঙ্গে কথা বলেছি। আমাদের ট্যালেন্ট আছে, আক্রমণাত্মক মানসিকতা আছে। শুধু দরকার আত্মবিশ্বাস। ইনশাআল্লাহ আমরা উইনিং টিম হব।”
বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে খেলা শুধু বাংলাদেশের নয়, পুরো উপমহাদেশের জন্যই গর্বের বিষয় বলে মনে করেন হামজা। নিজের অভিজ্ঞতা দিয়েও কোচকে সহায়তা করেন তিনি। “কোচ বড় সিদ্ধান্তগুলো নেন, তবে কিছু বিষয়ে আমার মতামত চান। আমি আমার অভিজ্ঞতা দিয়ে সহায়তা করি। পরিকল্পনা ঠিক আছে, দল পরিশ্রম করছে,” বললেন তিনি।
১০ জুন সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচের স্মৃতি এখনও তার মনে আছে। সেই ম্যাচে সুযোগ কাজে লাগাতে না পারার আক্ষেপও আছে তার কণ্ঠে। “সে ম্যাচে সুযোগ কাজে লাগাতে পারিনি। বড় মুহূর্তে আমরা হতাশ করেছি নিজেদের। রক্ষণে আরও ভালো করতে পারলে হয়তো গোল হজম হতো না। এমনকি একটি পেনাল্টিও পাওয়া উচিত ছিল। তবে ফুটবল এমনই, সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা যায় না,” বলেন তিনি।
হংকং ম্যাচকে তিনি ভিন্ন এক চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন। “এখন আমরা হংকং ম্যাচ নিয়ে ভাবছি। এটা অন্যরকম চ্যালেঞ্জ। তবে বিশ্বাস করি আমরা জিতব। আমাদের পরিকল্পনায় অটল থাকতে হবে,” মন্তব্য হামজার।
একজন পেশাদার ফুটবলার হিসেবে চ্যালেঞ্জ নেওয়াই স্বাভাবিক বলে মনে করেন তিনি। “এটা ফুটবল। চলার পথে চ্যালেঞ্জ আসবে। আমরা অজুহাত দাঁড় করাতে চাই না। ভারত ও সিঙ্গাপুর ম্যাচেও চোট সমস্যা ছিল। শামিত আজ রাতে আসবে। আমাদের স্কোয়াড খুব ভালো, বেঞ্চের খেলোয়াড়দের ওপরও পূর্ণ আস্থা আছে,” বলেন তিনি।
সিঙ্গাপুর ম্যাচে নিজের নষ্ট করা গোলের সুযোগ নিয়েও খোলামেলা হামজা। “খুব খারাপ লেগেছিল। রিপ্লেতে আবার দেখেছি মুহূর্তটা। পরেরবার ইনশাআল্লাহ সুযোগ কাজে লাগাব। জানি আমার প্রতি প্রত্যাশা অনেক বেশি। আমি সেটি পূরণ করতে পারব। ওই দিনটা আমাদের ছিল না। দুটি অসাবধানী মুহূর্তে গোল হজম করেছি, যা উচিত ছিল না। শেষদিকে আমাদের পেনাল্টিও দেওয়া উচিত ছিল,” বলেন তিনি।
কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা জানিয়েছেন, তিনি হামজাকে নিচে ও ওপরে দুই জায়গায়ই ব্যবহার করতে চান। বাড়তি চাপ অনুভব করছেন কিনা জানতে চাইলে হামজার উত্তর, “না, মিডফিল্ডারের কাজই হলো রক্ষণ ও আক্রমণ দুই জায়গায় অবদান রাখা। ইনশাআল্লাহ আমি দুটোই ভালোভাবে করতে পারব। এটা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব, তবে আমি বেশ রোমাঞ্চিত।”
সমর্থকদের প্রত্যাশা, দলের প্রস্তুতি, এবং নিজের দৃঢ় আত্মবিশ্বাস— সব মিলিয়ে আসন্ন হংকং ম্যাচের আগে বাংলাদেশ শিবিরে এখন জয়ের জোয়ার। আর সেই বিশ্বাসের কেন্দ্রে আছেন হামজা চৌধুরী, যিনি দেশের ফুটবলের সবচেয়ে বড় তারকা হিসেবে ঘোষণা করেছেন, “ইনশাআল্লাহ আমরা জিতব।”