close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

জনতার ভয়ে ডোবায় কেশবপুর আওয়ামী লীগের সভাপতি

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
নাশকতার মামলায় পলাতক মেয়র রফিকুল ইসলাম জনতার ধাওয়ায় ডোবায় ঝাঁপ দিলেও শেষ রক্ষা হয়নি। ছাত্র-জনতা তুলে দেয় পুলিশের হাতে।..

যশোরের কেশবপুরে ঘটলো চাঞ্চল্যকর এক ঘটনা—নাশকতা ও চাঁদাবাজিসহ একাধিক মামলার পলাতক আসামি, কেশবপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং পৌরসভার সাবেক মেয়র রফিকুল ইসলাম ছাত্র-জনতার ধাওয়ায় প্রাণ বাঁচাতে বাড়ির পাশের ডোবায় লাফ দেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আত্মগোপনও তাঁকে রক্ষা করতে পারেনি—স্থানীয়দের হাত ধরে শেষ পর্যন্ত পুলিশের কাছেই তুলে দেওয়া হয় তাঁকে।

বুধবার (১৮ জুন) দুপুর তিনটার দিকে কেশবপুর পৌরসভার ভবানীপুর এলাকায় এ নাটকীয় ঘটনা ঘটে। সারা এলাকায় মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে রফিকুল ইসলামের ধরা পড়ার খবর। এলাকার মানুষ ছুটে আসে ঘটনাস্থলে। পুরো এলাকা যেন এক মহা নাট্যমঞ্চ।

গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই আত্মগোপনে ছিলেন রফিকুল ইসলাম। অভিযোগ রয়েছে, তিনি বিভিন্ন সময়ে চাঁদাবাজি ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। দীর্ঘদিন গা ঢাকা দিয়ে থাকার পর সম্প্রতি তিনি গোপনে নিজ বাড়ি ভবানীপুর মোড়লপাড়ায় ফিরে আসেন। তবে এলাকাবাসীর চোখ এড়িয়ে তার ফিরে আসা সম্ভব হয়নি।

বুধবার দুপুরের দিকে স্থানীয় ছাত্র ও জনতা তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে তাকে ঘিরে ফেলে। বাড়ি ঘেরাও করে রাখে চারদিক থেকে। ঘটনাস্থলে উত্তেজনার মাত্রা বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে রফিকুল ইসলাম পরিস্থিতি বুঝে ফেলেন এবং সেখান থেকে পালানোর চেষ্টা করেন।

আত্মগোপনের সময়ের মতো এবারও কৌশল অবলম্বন করেন রফিকুল। তিনি পাশের বাড়ি—আরিফুর রহমান মিলনের ঘরে গিয়ে আশ্রয় নেন। কিন্তু ছাত্র-জনতার নজর এড়িয়ে থাকা সম্ভব হয়নি। মুহূর্তেই তারা ওই বাড়িও ঘিরে ফেলে। চারদিক থেকে আটকা পড়া রফিকুল শেষ রক্ষা করতে পারেননি।

ভয়ে-আতঙ্কে তিনি হঠাৎ করেই পাশের একটি কচুরিপানা ভর্তি ডোবায় ঝাঁপ দেন। স্থানীয়রা জানান, একসময়কার ক্ষমতাধর এই নেতাকে এমনভাবে লুকাতে হবে, সেটা কেউ কল্পনাও করেনি। পানিতে লুকিয়ে রক্ষা পেতে চাইলেও সেটা সম্ভব হয়নি। স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়।

খবর পেয়ে কেশবপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। এরপর স্থানীয় ছাত্র ও যুবকরা রফিকুল ইসলামকে ডোবা থেকে তুলে এনে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পুরো ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, “রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে নাশকতা, চাঁদাবাজি ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ।” তিনি আরও জানান, তার বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করা হবে।

রফিকুল ইসলামের গ্রেপ্তারের ঘটনায় এলাকায় অনেকটাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে সাধারণ মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এলাকায় অনুপস্থিত থাকলেও তার বিরুদ্ধে ভয়ের বাতাবরণ তৈরি ছিল। স্থানীয়রা মনে করছে, তার গ্রেপ্তারের মাধ্যমে কেশবপুরে একটি যুগের অবসান ঘটলো।

তবে এলাকাবাসীর প্রশ্ন, এতদিন তিনি কোথায় ছিলেন? কীভাবে আত্মগোপনে থেকেও আবার এলাকায় ফিরলেন? কারা তাকে সহায়তা করেছিল? প্রশাসন এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে।

একদা ক্ষমতাধর এই নেতা যখন জনতার রোষে ডোবায় লাফাতে বাধ্য হন, তখন কি রাজনীতির মঞ্চে তার পুনরাবির্ভাব সম্ভব?
নাকি এখানেই শেষ এক অধ্যায়?

Ingen kommentarer fundet