যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব আইন বদলের উদ্যোগে একের পর এক বাধার মুখে পড়লেও অবশেষে কিছুটা স্বস্তি পেলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব (যুস সোলি) বাতিলের ঘোষণা দিয়ে বিচারব্যবস্থার চাপে পড়ে গেলেও এবার সুপ্রিম কোর্ট তার পক্ষে সীমিত সহানুভূতির বার্তা দিলো।
গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর থেকেই ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছিলেন, অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে তিনি ১৮৬৮ সালের ১৪তম সংশোধনীর ভিত্তিতে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব প্রদান বন্ধ করতে চান। যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী শিশুদের—যাদের মা-বাবা নাগরিক নন—তাদের নাগরিকত্ব না দেওয়ার জন্য তিনি এক নির্বাহী আদেশে সইও করেছিলেন।
২০২৫ সালের ২১ জানুয়ারি, হোয়াইট হাউসে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রবেশের ঠিক ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তিনি সেই নির্দেশনা জারি করেন। এতে বলা হয়, জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব আইন পর্যালোচনা করে সেটিকে নতুন কাঠামোয় আনা হবে। কিন্তু এরপরেই দেশজুড়ে শুরু হয় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া এবং আইনি লড়াই।
প্রথমেই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন। এর পর এক গর্ভবতী অভিবাসী নারী মামলায় যুক্ত হন, এবং পরে ডেমোক্র্যাটদের নেতৃত্বে থাকা ২২টি রাজ্য একত্রিত হয়ে এই আইন বাতিলের দাবিতে ফেডারেল আদালতে আবেদন করে।
ওয়াশিংটন, ম্যাসাচুসেটস এবং মেরিল্যান্ডের তিনটি পৃথক আদালত এই নির্বাহী আদেশের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। আদালতগুলো জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীতে স্পষ্টভাবে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের কথা বলা হয়েছে, যা হঠাৎ করে নির্বাহী আদেশে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।
এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালত কিছুটা ভারসাম্যের বার্তা দেয়। তারা বলেন, “প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের উপরে বিচারবিভাগের নিরবচ্ছিন্ন কর্তৃত্ব থাকতে পারে না। অনেক সময় আইনের কাঠামোই আদালতকে বাধা দেয়।” অর্থাৎ আদালত নিজেই বুঝিয়ে দিল যে, নির্বাহী বিভাগ যদি সংবিধান লঙ্ঘন না করে তবে তাতে হস্তক্ষেপ করার এখতিয়ার সীমিত।
তবে সুপ্রিম কোর্ট এটাও স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, আগামী ৩০ দিনের মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন নতুন নাগরিকত্ব আইন কার্যকর করতে পারবে না। এর ফলে সরকারকে আইনি দিকগুলো আরও ভালোভাবে খতিয়ে দেখে তবেই কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
“জুস সোলি” ল্যাটিন শব্দ, যার অর্থ “মাটির অধিকার”। এই নীতির ভিত্তিতে মার্কিন সংবিধান বলেছে—যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে জন্ম নেওয়া প্রত্যেক শিশুই স্বয়ংক্রিয়ভাবে নাগরিকত্ব পাবে, তার বাবা-মা অভিবাসী হলেও।
এই নীতির বিরোধিতা করে বহুদিন ধরেই ট্রাম্প ও তার সমর্থকরা বলে আসছেন, এর ফলে অবৈধ অভিবাসী প্রবেশ আরও বাড়ছে। বিশেষ করে, অনেকেই কেবল যুক্তরাষ্ট্রে সন্তান জন্ম দিতে চাইলেই অবৈধভাবে প্রবেশ করে, যেন সন্তান নাগরিকত্ব পায়। ট্রাম্পের যুক্তি, এর ফলে প্রকৃত নাগরিকরা বঞ্চিত হচ্ছে, এবং দেশের সম্পদ অবৈধদের উপর খরচ হচ্ছে।
এই ইস্যুতে ট্রাম্পের অবস্থান রিপাবলিকান ভোটারদের মধ্যে প্রশংসিত হলেও ডেমোক্র্যাট ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো একে অমানবিক ও অসাংবিধানিক বলছে। ডেমোক্র্যাটরা মনে করছে, এটি মূলত নির্বাচনী রাজনীতি এবং অভিবাসীদের ভয় দেখিয়ে ভোট টানার একটি পরিকল্পনা।
ট্রাম্প চাইলেও এই আইনি লড়াই সহজ হবে না। যদিও সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ রিপাবলিকান শিবিরে সাময়িক উৎসাহ জুগিয়েছে, তবে শেষ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নাগরিকত্ব নীতিতে কী প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলে দেবে।