close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

যমেক হাসপাতালের ১০ তলা ভবন নির্মাণের ব্যয় অনুমোদন দেড় দশক পর।..

সুভাষ মজুমদার avatar   
সুভাষ মজুমদার
যশোর মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ দেড় দশক পর ১০তলা বিশিষ্ট হাসপাতাল ভবন নির্মাণের ব্যয় অনুমোদন দেয়া হয়েছে।..

যশোর মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ দেড় দশক পর ১০তলা বিশিষ্ট হাসপাতাল ভবন নির্মাণের ব্যয় অনুমোদন দেয়া হয়েছে। গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ডক্টর সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। হাসপাতাল ভবন নির্মাণ না হলেও কাজ চলমান রয়েছে কলেজ অধ্যক্ষ ও হাসপাতাল পরিচালকের বাসভবনের জন্য ৪তলা বিশিষ্ট ও ৬তলা বিশিষ্ট ডক্টরস কোয়ার্টার, ডরমেটরি, সিনিয়র স্টাফ নার্স কোয়ার্টার, ডরমেটরি এবং ইন্টার্ণ ডক্টরস ডরমেটরির নির্মাণ কাজ। যশোর গণপূর্ত প্রকৌশল বিভাগ থেকে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।যশোর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, মূল হাসপাতাল ভবন নির্মাণের জন্য ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে দরপত্র আহবান করা হয়েছে। কিন্তু ব্যয় অনুমোদন না পাওয়ায় ঠিকাদার নিয়োগসহ নির্মাণ কাজ শুরু করা যায়নি। সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি ব্যয় অনুমোদন দিয়েছেন। যতদ্রুত সম্ভব নির্মাণ কাজ শুরু হবে।


নির্বাহী প্রকৌশলী আরও জানান, যশোর মেডিকেল কলেজে জমির পরিমাণ ২৫ একর। ওই জমিতেই প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে হাসপাতাল। একটি বেজমেন্টসহ ১০তলা হাসপাতাল ভবন নির্মাণ করা হবে। এটির বেজমেন্টে ১০৪টি কার পার্কিংসহ আসবাবপত্রের স্টোর সুবিধা থাকবে। ভবনের নিচতলায় জরুরি বিভাগ, মরচুয়ারি বহিঃবিভাগ, দ্বিতীয় তলায় ক্যাফেটোরিয়া, রেডিওলোজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের আওতায় সিটিস্ক্যান, এক্স-রে, এমআরআই, আল্ট্রাসনো বিভাগ থাকবে। ভবনে থাকছে অস্ত্রপচারের জন্য ১১টি অপারেশন থিয়েটারের সমন্বয়ে ওটি কমপ্লেক্স কাম রিকভারি ইউনিট। কিডনি ডায়ালাইসিস ইউনিট, নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট (আইসিইউ), উচ্চ নির্ভরতা ইউনিট ( এইচডিইউ), করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ)। রোগী ভর্তি রেখে চিকিৎসার জন্য ৪১৭টি ওয়ার্ড ও ৪০টি কেবিন নির্মাণ করা হবে।


এছাড়াও অন্যান্য সুবিধার মধ্যে থাকছে প্রশাসনিক ব্লক, ডে-হসপিটাল, ফার্মেসি, লন্ড্রি, সেন্ট্রাল স্টেরাইল, সাপ্লাই ডিপার্টমেন্ট (সিএসএসও) ও স্টোরেজসহ আনুষাঙ্গিক সুবিধা।


এগুলো চলমান থাকার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে ১০তলা বিশিষ্ট হাসপাতাল ভবন নির্মাণের ব্যয় অনুমোদন দেয়া হলো।২০১০ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার যশোর মেডিকেল কলেজ স্থাপন করে। ভবন নির্মাণ না হওয়ায় ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট যশোর জেনারেল হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে একাডেমিক কার্যক্রম চালুর সিদ্ধান্ত হয়। ২০১০-২০১১ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি করে মেডিকেল কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হলেও হাসপাতাল ভবন স্থাপনের বিষয় থমকে থাকে। ২০১১ সালের ১৪ মার্চ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে একই বছরের ৭ আগস্ট স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে আদেশ জারি করা হয় ভবন নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হিসেবে গণ্য হবে। মেডিকেল কলেজে পদায়িত ক্লিনিক্যাল বিভাগের শিক্ষকগণ শিক্ষার্থীদের পাঠদানের পাশাপাশি হাসপাতালের বর্হিঃ বিভাগ ও বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীদের চিকিৎসা দিবেন। একই সাথে হাসপাতালে পদায়িত সিনিয়র এবং জুনিয়র কনসালটেন্টগণ মেডিকেল কলেজে পাঠদানে অংশ নেবেন। প্রথম অবস্থায় উভয় অধিদপ্তর এবং মন্ত্রণালয়ের তদারকির পাশাপাশি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে শিক্ষা কার্যক্রম ও রোগীর চিকিৎসা ভালোই চলছিলো। এতে যশোরসহ আশপাশের জেলার মানুষের প্রত্যাশা বেড়ে যায়। চিকিৎসা প্রত্যাশী রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে মেডিকেল কলেজের ক্লিনিক্যাল বিভাগের শিক্ষকগণ হাসপাতালের বর্হিঃ বিভাগ ও ভর্তি রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার ক্ষেত্রে উদাসীনতা দেখাতে শুরু করেন। যা চরম পর্যায়ে পৌঁছে। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সেক্টর কর্মসূচির আওতায় স্থাপিত যশোর, কক্সবাজার, পাবনা ও নোয়াখালী জেলায় মেডিকেল কলেজের পাশাপাশি আনুষঙ্গিক সুবিধা-সম্বলিত চারটি হাসপাতাল নির্মাণের কথা পরিকল্পনা ছিলো। দুই হাজার ১০৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ৫ মে অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এরমধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৬৬৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা এবং ভারতীয় ঋণ (এলওসি-২) থেকে এক হাজার ৪৪০ কোটি টাকা পাওয়ার কথা ছিলো। ওই বছরের ১৫ জুলাই যশোর মেডিকেল কলেজ পরিদর্শনে আসেন “এস্টাবলিশমেন্ট অব ৫০০ বেডেড হসপিটাল এন্ড এনসিলারি ভবন ইন যশোর, কক্সবাজার, পাবনা ও আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ এবং জননেতা নুরুল হক আধুনিক হাসপাতাল নোয়াখালী” শীর্ষক প্রকল্পের পরিচালক ডাক্তার কুতুবউদ্দীন মুহাম্মদ আজাদ। সেদিন মতবিনিময় সভায় জানানো হয়েছিলো ২০১৮ সালের মধ্যেই দৃশ্যমান হবে ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ভবন। তিনি দাবি করেছিলেন হাসপাতাল ভবনসহ অন্যান্য ভবনের নকশা তৈরী ও অনুমোদনের কাজ সম্পন্ন। আন্তর্জাতিক টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্নের কথাও তিনি বলেন।

প্রকল্প পরিচালক আরও জানিয়েছিলেন, যশোরসহ চার জেলায় ৫০০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ১শ’ ৩ কোটি টাকা। এরমধ্যে ভারতীয় ঋণ (এলওসি) থেকে যোগান পাওয়া যাচ্ছে ১৮ কোটি ডলার বা এক হাজার ৪শ’ ৪০ কোটি টাকা। বাকী ৬শ’ ৩৩ কোটি টাকার যোগান পাওয়া যাবে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে। ২০২১ সালের ৩০ জুনের মধ্যে প্রতিটি মেডিকেল কলেজে পাঁচতলা হাসপাতাল ভবন, শিক্ষার্থীদের হোস্টেল সম্প্রসারণ ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের জন্য ডরমেটরি নির্মাণের প্রস্তুতি ছিলো। এছাড়াও চিকিৎসক, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আবাসিক ও প্রয়োজনীয় অন্যান্য ভবন নির্মাণ, হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজের জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি এবং প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রও সংগ্রহের জন্য প্রকল্পের আওতাভুক্ত করা হয়।


নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ার পর প্রতিটি হাসপাতালে ২শ’ ৫০জনের পদ সৃষ্টি করে নিয়োগ দিয়ে চিকিৎসা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনারও পরিকল্পনা করা হয়। তবে একে একে পার হয়ে যায় চার বছর। ৫০০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ শেষ হয়ে যায় ২০২১ সালের জুনে। কিন্তু যশোর, কক্সবাজার, নোয়াখালী ও পাবনার বিদ্যমান মেডিকেল কলেজের জন্য ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণে কোনো অগ্রগতি হয়নি। ফলে প্রকল্প থেকে ঋণ বাতিল করে দেয় ভারত সরকার। নতুন করে সম্পূর্ণ দেশীয় অর্থায়নে প্রকল্পের কাজ শুরুর পরিকল্পনা করা হয়। এতে প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বেড়ে যায়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছিলো না। যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল স্থাপন ও চিকিৎসা কার্যক্রম শুরুর দাবিতে গড়ে ওঠে নাগরিক আন্দোলন। ২০২২ সালে যশোরে তৎকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষে আন্দোলন জোরদার করা হয় যাতে জনসভা থেকে তিনি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণের ঘোষণা দেন। কিন্তু তা হয়নি। ফলে আন্দোলন আরও বেগবান হয়। এরপর ২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় যশোরসহ চারটি জেলায় ৫০০ শয্যার হাসপাতাল বাস্তবায়ন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পের নাম অ্যাস্টাবলিশমেন্ট অব ৫০০ বেডেড হসপিটাল অ্যান্ড এনসিলারি ভবন ইন যশোর, কক্সবাজার, পাবনা ও আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। গতকাল এসব হাসপাতাল ভবন নির্মাণের ব্যয় অনুমোদন দেয়া হলো।

Nessun commento trovato


News Card Generator