জিএম কাদেরের বাসায় আ'গু'নের ঘটনায় মামলা নিয়ে ওসির গড়িমসির অভিযোগ..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
রংপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের পৈতৃক বাড়িতে সশস্ত্র হামলা, আগুন ও গুলির ঘটনায় থমকে গেছে নগরবাসী। অথচ মামলার বদলে থানায় চলছে সময়ক্ষেপণ ও দায়িত্ব এড়ানোর খেলা! ছাত্র সমাজ দিয়েছে ২৪ ঘণ্টার আ..

রংপুরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদেরের পৈতৃক বাসভবনে ভয়াবহ হামলা, আগুন এবং গুলির ঘটনায় থানায় গিয়ে প্রতিকার তো দূরের কথা, উল্টো হয়রানির শিকার হয়েছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আতাউর রহমান মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে দায়িত্ব এড়ানোর অভিযোগে আবারও প্রশ্নবিদ্ধ হলেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রশাসন।

শুক্রবার (৩০ মে) রাতে, ছাত্র সমাজের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব আরিফ আলী অভিযোগ করেন, জি এম কাদেরের বাসায় হামলার ঘটনায় তিনি ও অন্যান্য দলীয় নেতারা মামলা করতে কোতোয়ালি থানায় যান। কিন্তু প্রায় এক ঘণ্টা বসিয়ে রেখে ওসি মামলার আবেদন গ্রহণ না করে বরং আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেন। তার ভাষায়, “ওসি আতাউর রহমান রাজনৈতিক নির্দেশে মামলা নিতে গড়িমসি করছেন। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন—এই ঘটনায় মামলা রেকর্ড করা সম্ভব নয়।”

এই ঘটনার পর জাতীয় ছাত্র সমাজ নেতারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। আরিফ আলী সাফ জানিয়ে দেন, “আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মামলা রেকর্ড না হলে, উদ্ভূত যেকোনো পরিস্থিতির জন্য সম্পূর্ণভাবে ওসি দায়ী থাকবেন। প্রয়োজনে আমরা রাজপথে কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবো।”

তাণ্ডবের বিবরণ ভয়ংকর:
ছাত্র সমাজের অভিযোগ, ওই দিন রাত ৯টার দিকে রংপুর নগরীর সেনপাড়ায় অবস্থিত জি এম কাদেরের ‘স্কাই ভিউ’ পৈতৃক বাসভবনে হামলা চালানো হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বহিষ্কৃত কিছু সদস্যের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী কাটা রাইফেল, দেশীয় অস্ত্র, ককটেল এবং গানপাউডার নিয়ে হামলায় অংশ নেয়। তারা বাসভবনের কাঁচ ভাঙে, গুলিবর্ষণ করে এবং বাইকে আগুন ধরিয়ে দেয়।

আরও ভয়াবহ তথ্য হলো—হামলাকারীরা জি এম কাদেরকে হত্যার উদ্দেশ্য নিয়েই হামলা চালিয়েছিল বলে অভিযোগ। সেদিন তিনি বাড়িতে অবস্থান করছিলেন এবং হামলার সময় তার কক্ষ লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়ে জানালার কাচ ভেঙে দেওয়া হয়।

মামলার খসড়ায় রংপুর মহানগর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি, জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা নাহিদ হাসান খন্দকারসহ মোট ২২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আরও ৫০-৬০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

আরিফ আলীর ভাষায়, “বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আমি রংপুরে নেতৃত্ব দিয়েছি। এজন্য আওয়ামী লীগ সরকারের পুলিশ আমাকে গ্রেপ্তার করে ১৭ দিন কারাগারে রেখেছিল। ৫ আগস্ট আমি মুক্তি পাই। সেই দিন থেকেই আবারও আমাদের দমিয়ে রাখার চেষ্টা চলছে।”

পুলিশি টালবাহানার প্রতিক্রিয়া:
এ ঘটনার পর রাত ১১টার দিকে আবারও থানায় যান আরিফ আলী এবং জাতীয় পার্টির স্থানীয় নেতারা। তখন ওসি অভিযোগ গ্রহণ করেন ঠিকই, তবে মামলার ব্যাপারে তিনি কিছু জানাননি। রাত ১২টার কাছাকাছি সময় সাংবাদিকরা যোগাযোগ করলে ওসি আতাউর রহমান বলেন, “লিখিত অভিযোগটি নিয়েছি, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

তবে ছাত্র সমাজ নেতারা এটিকে চরম অপমান ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার লঙ্ঘন বলে দাবি করছেন। তারা বলেন, “এত বড় সন্ত্রাসী হামলা, প্রকাশ্য গুলিবর্ষণ, অগ্নিসংযোগ—এর পরও যদি পুলিশ মামলা না নেয়, তবে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়?”

রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ:
জাতীয় পার্টির নেতারা মনে করছেন, সরকারবিরোধী রাজনীতি চাপে ফেলতেই এই হামলা চালানো হয়েছে এবং প্রশাসন ইচ্ছাকৃতভাবে মামলা নিচ্ছে না। ছাত্র সমাজের হুঁশিয়ারি, “এটি শুধু দলীয় নয়, জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন। আইনের শাসন না থাকলে জনগণের রাস্তায় নামা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।”

রংপুরের ঘটনা আবারও দেখিয়ে দিল—বাংলাদেশে রাজনীতির নামে সহিংসতা কতটা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। এরচেয়েও উদ্বেগজনক হলো, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নীরবতা ও দায়িত্বহীন আচরণ। এখন সময় এসেছে—দোষীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে দেওয়ার।

Ingen kommentarer fundet