একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে সরকার শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে দেওয়া স্বাধীনতা পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। দীর্ঘ নয় বছরের বিতর্ক ও রাজনৈতিক টানাপড়েন শেষে সরকার ২০১৬ সালের পুরস্কার বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (১৬ মে) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, “২০০৩ সালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে যে স্বাধীনতা পুরস্কার (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়েছিল, তা সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রেক্ষাপটে ২০১৬ সালে বাতিল করা হয়। তবে উক্ত রায়ে পুরস্কার বাতিলের কোনো নির্দেশনা ছিল না। বরং মহান মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমানের অসাধারণ অবদান বিবেচনায় সরকার সেই সিদ্ধান্ত রহিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার এক বিতর্কিত সিদ্ধান্তে জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পুরস্কার বাতিল করে এবং জাতীয় জাদুঘর থেকে তার পুরস্কারের মেডেল ও সম্মাননাপত্র সরিয়ে ফেলে। এই সিদ্ধান্তকে ফ্যাসিবাদী ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হিসেবে দেখেছিল বিএনপিসহ বিভিন্ন বিরোধী দল।
তবে সময়ের পরিক্রমায় সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ব্যাখ্যা এবং জাতির মুক্তিযুদ্ধে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ভূমিকাকে পুনর্মূল্যায়নের ফলে পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তে আসে সরকার।
এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সরকারের পক্ষ থেকে একটি ইতিবাচক বার্তা দেওয়া হয়েছে যে, জাতীয় ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রদের প্রতি সুবিচার করা হবে – রাজনৈতিক পরিচয় যাই হোক না কেন।
এর পাশাপাশি ২০২৫ সালের জন্য স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্তদের নামও ঘোষণা করেছে সরকার। এবারের তালিকায় রয়েছেন জাতির গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের অধিকারী ৭ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি, যাদের অধিকাংশই মরণোত্তর সম্মাননার জন্য মনোনীত হয়েছেন।
স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২৫ প্রাপ্তরা:
-
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি: অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম (মরণোত্তর)
-
সাহিত্য: মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ (মরণোত্তর)
-
সংস্কৃতি: নভেরা আহমেদ (মরণোত্তর)
-
সমাজসেবা: স্যার ফজলে হাসান আবেদ (মরণোত্তর)
-
মুক্তিযুদ্ধ ও সংস্কৃতি: মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান ওরফে আজম খান (মরণোত্তর)
-
শিক্ষা ও গবেষণা: বদরুদ্দীন মোহাম্মদ উমর
-
প্রতিবাদী তারুণ্য: আবরার ফাহাদ (মরণোত্তর)
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই সম্মাননার মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন খাতে অসামান্য অবদান রাখা ব্যক্তিদের স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দেশপ্রেম, ন্যায়বোধ ও প্রতিবাদী চেতনার অনুপ্রেরণা জোগাবে বলে আশা করা হয়।
বিশ্লেষকদের মতে, জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়ার এ সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক ভারসাম্য ও ঐতিহাসিক পুনর্মূল্যায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি প্রমাণ করে যে, ইতিহাসের সত্য একদিন সামনে আসেই — দেরিতে হলেও।
এ সিদ্ধান্তের ফলে নতুন করে আলোচনায় এসেছে মুক্তিযুদ্ধ, এর নেতৃত্ব ও পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির ন্যায়বিচার প্রশ্নটি। একইসঙ্গে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ভূমিকা নিয়ে যে বিতর্ক দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছিল, সেটির অবসানের ইঙ্গিতও মিলছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বক্তব্যে।
এখন দেখার বিষয়, এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় এবং ভবিষ্যৎ ইতিহাস চর্চায় এই সিদ্ধান্ত কীভাবে প্রতিফলিত হয়।