রাজধানীর বুকে পুলিশের উপর গুলির পরও তিন মাদক কারবারিকে পাকড়াও! জীবন হাতে করে অভিযান চালিয়ে দেশের যুবসমাজকে রক্ষা করছে পুলিশ—ঘটনাস্থলে গিয়ে এমনই মন্তব্য স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার।..
পুলিশের গায়ে গুলি, তবুও থেমে নেই অভিযান—জীবন হাতে করে মাদকবিরোধী লড়াইয়ে অটল পুলিশ
ঢাকা শহরের কেন্দ্রস্থল পল্টনে বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) দুপুরে সংঘটিত এক নাটকীয় অভিযানে গুলিবিদ্ধ হন পুলিশের দুই সদস্য। রাজধানীর ব্যস্ততম মোড় ফকিরাপুলে মাদকবিরোধী অভিযানের সময় মাদক কারবারিদের ছোঁড়া গুলিতে আহত হন গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আতিক হাসান এবং কনস্টেবল সুজন। ঘটনাটি পুলিশ প্রশাসনসহ পুরো জাতিকে নাড়া দিয়েছে।
ঘটনার পর আহতদের দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে উপস্থিত হন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। সেখানে তিনি সাহসী পুলিশ সদস্যদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন এবং সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
পুলিশ বাহিনী কোনো অবস্থাতেই পিছপা হচ্ছে না। তারা জীবন বাজি রেখে সাহসিকতার সঙ্গে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। এই দুটি পুলিশ সদস্যের মধ্যে একজনের পেটে গুলি লেগেছে, অন্যজনের হাঁটুতে—তবুও তারা থামেনি। আহত হওয়ার পরও তিনজন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।”
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর ফকিরাপুল মোড়ে একটি প্রাইভেটকারে থাকা সন্দেহভাজন মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে গোয়েন্দা পুলিশ। পুলিশ সদস্যরা গাড়িটি থামাতে গেলে আচমকা গুলি চালায় গাড়ির ভেতরে থাকা মাদক কারবারিরা। গুলি সরাসরি আঘাত করে পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক আতিক হাসানের পেটের বাম পাশে এবং কনস্টেবল সুজনের বাম পায়ের হাঁটুতে।
দ্রুত আহত পুলিশ সদস্যদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, আতিক হাসানের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হলেও বর্তমানে তার অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কনস্টেবল সুজনের হাঁটুতে আঘাত গুরুতর হলেও বিপদমুক্ত।
পুলিশ আহত হয়েও সাহসিকতার সাথে প্রতিক্রিয়া দেখায় এবং ঘটনাস্থল থেকে চারজন মাদক কারবারির মধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। অভিযুক্তদের ব্যবহৃত একটি প্রাইভেটকার, আগ্নেয়াস্ত্র এবং বিপুল পরিমাণ মাদক দ্রব্য উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীতে মাদক সরবরাহ করে আসছিল।
এই অভিযান প্রমাণ করে, মাদক নির্মূলের প্রশ্নে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কতটা কঠোর ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ রক্ষায় কোনো ছাড় নেই।
এই ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাধারণ মানুষ পুলিশের সাহসিকতার প্রশংসা করছে। অনেকে লিখেছেন, “পুলিশের এই আত্মত্যাগ আমাদের চোখে জল এনে দিয়েছে।” আবার কেউ বলছেন, “মাদকের বিরুদ্ধে এমন লড়াই দেখতে চাই প্রতিটি থানায়।”
পুলিশ সদর দফতর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গোয়েন্দা বিভাগের আরও কয়েকটি ইউনিট বর্তমানে এই চক্রের সঙ্গে জড়িত অন্যান্য সদস্যদের খুঁজে বের করতে তৎপর রয়েছে। খুব শিগগিরই বড় ধরনের আরেকটি মাদকবিরোধী অভিযান চালানো হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে সূত্র।
পল্টনের রাস্তায় পুলিশের উপর গুলিবর্ষণের এই ঘটনা দেশের আইনশৃঙ্খলার চ্যালেঞ্জকে সামনে এনে দিয়েছে। তবে সেই সঙ্গে আবারও প্রমাণিত হয়েছে—বাংলাদেশ পুলিশের সাহস, দায়িত্ববোধ, ও জনগণের জন্য আত্মত্যাগের মানসিকতা প্রশ্নাতীত। পুলিশ শুধু আইন প্রয়োগ করছে না, বরং জীবন হাতে নিয়ে একটি সুস্থ সমাজ গড়ার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।