ঝালকাঠি: বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টোর মনোনয়নের পরই ঝালকাঠি-২ (নলছিটি ও ঝালকাঠি সদর) আসনে দলীয় কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছে, যা জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। দলীয় নেতৃত্ব ও তৃণমূলের কর্মীদের কাছ থেকে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন গুরুতর অভিযোগ আসতে শুরু করেছে। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির সাথে দীর্ঘমেয়াদী যোগাযোগ এবং গত ১৭ বছর ধরে দলের কার্যক্রমে নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে তাকে। এজন্য অনেকে তার মনোনয়ন নিয়ে শঙ্কিত এবং ক্ষুব্ধ।
মনোনয়ন পাওয়ার পর অন্যান্য প্রার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ দানা বেঁধেছে
ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো মনোনয়ন পাওয়ার পর, একই আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী জেবা আল আমিন এবং জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট শাহাদাৎ হোসেন তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা প্রশ্ন করেন যে বিগত কঠিন সময়গুলোতে দলের পাশে থেকে তিনি কেন সক্রিয় ভূমিকা পালন করেননি এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় কেন তিনিও দলের জন্য সংগ্রামী ভূমিকা গ্রহণ করেননি। অ্যাডভোকেট শাহাদাৎ হোসেন এমনকি অভিযোগ করেছেন যে ইলেন ভুট্টোকে মনোনয়ন দেওয়া সম্ভবত আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে বেশ খুশি করেছে, যা দলের জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়া, তার বিরুদ্ধে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের সক্রিয় আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হচ্ছে
বিএনপির একটি বড় অংশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইলেন ভুট্টোর মনোনয়নের বিরোধিতা করছে এবং তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করছে। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, তিনি দলের সংগ্রামের সময় সবসময়ই ছিলেন অনুপস্থিত এবং সম্প্রতি ঘটে যাওয়া জুলাই গণঅভ্যুত্থানে তার কোনো সক্রিয় ভূমিকা ছিল না। ঝালকাঠি জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মো: শাহিন হোসেন লিখেছেন, "২০০১-২০০৬ সময়কালে তিনি দলের ক্ষতির জন্য তেমন কিছু করেননি এবং ১/১১-তে সংস্কারবাদীদের সাথে দলবিরোধী ষড়যন্ত্র করলেন। এমনকি ২০০৮ সালে নির্বাচনের ফলাফলের আগেই তিনি পালিয়ে যান। তিনি দীর্ঘ ১৭ বছরে ঝালকাঠি বা নলছিটির কোনো দলীয় প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেননি।" দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের মধ্যে এই মনোনয়ন নিয়ে গভীর হতাশা রয়েছে। তারা মনে করেন, এটি দলের দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে এবং দলীয় কর্মীদের মনোবল ভেঙে দিতে পারে।
এছাড়াও তার কর্মী সমার্থকদের বিরুদ্ধে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এ্যাড শাহাদাৎ হোসেন এর ব্যানার ছেঁড়ার অভিযোগ করেন বেশকিছু নেতাকর্মী
গণসংযোগে প্রশ্নের মুখে পড়ে নীরবতা অবলম্বন
দলীয় কোন্দল চরমে পৌঁছালে গণসংযোগের সময় প্রার্থী ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো সরাসরি প্রশ্নের সম্মুখীন হন। এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে তিনি অনেক ক্ষেত্রেই নীরব থাকে, যা দলের মধ্যে তার অবস্থা আরও জটিল করে তোলে। দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী জেবা আমীনা আল গাজী সরাসরি তাকে জিজ্ঞাসা করেন, "আপনি কোন আন্দোলন-সংগ্রামে দলের নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন? প্রতি আঘাতের সময়ে দলের জন্য লড়াই করেছিলেন কিনা?" তিনি এক-এগারোর সময় প্রার্থীর 'সংস্কারবাদী' ভূমিকা নিয়েও কড়া সমালোচনা করেন। অ্যাডভোকেট শাহাদাৎ হোসেন দলের ঐসব কর্মীদের কথা উল্লেখ করেন, যারা দলের দুঃসময়ে জেলে গিয়েছিলেন বা নিগৃহিত হয়েছেন এবং নির্বাচনী প্রচারণায় তাঁদের পাশে রাখার জন্য সুপারিশ করেন।
প্রার্থী ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টোর সংক্ষিপ্ত বক্তব্য: 'ঐক্য ও তারেক রহমানের সিদ্ধান্তকে সম্মান প্রদর্শন'
নেতাকর্মীদের ক্ষোভ ও অভিযোগের সামনে ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো বেশিরভাগ সময় নীরব ছিলেন, তবে তিনি বলেন, "আমি দলের সকল কর্মীর সহায়তা নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করতে চাই। দলের কাউকে আমি প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখি না। সবাইকে তারেক রহমানের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে দল ও দেশের স্বার্থে কাজ করতে অনুরোধ করছি।" যদিও ইলেন ভুট্টো দলীয় নেতাকর্মীদের সমালোচনাগুলোর বিরোধিতা করেননি, তারপরও তিনি আশা প্রকাশ করেছেন যে তারেক রহমানের দিকনির্দেশনা মেনে এবং ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলকে একত্রিত করতে পারবেন। দলের অভ্যন্তরে চলমান বিদ্রোহকে তিনি কীভাবে সামাল দেন এবং ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় নির্বাচনে কতদূর পর্যন্ত সফল হতে পারেন, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামি আন্দোলনের প্রার্থী ড. সিরাজুল ইসলাম সিরাজীও ক্ষেত্রে বিদ্যমান জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগাতে প্রস্তুত হয়ে উঠেছেন। পরিচিত মুখ হওয়ার সুবাদে এলাকায় তার প্রচুর পরিচিতি রয়েছে, যা নির্বাচনে তার সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। অতএব, এই বিভ্রান্তিমূলক পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয় তা সময়ই বলতে পারবে।



















