কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবি যেন রণক্ষেত্র! সরকারবিরোধী বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিচ্ছে জেন-জেড প্রজন্ম, পুলিশের কাঁদানে গ্যাস ও জলকামানে উত্তপ্ত শহর।
কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে ‘সাবা সাবা’ দিবসে সরকারবিরোধী বিক্ষোভের জেরে টালমাটাল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিচ্ছে বর্তমান প্রজন্মের ‘জেন-জেড’ তরুণরা। বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ব্যাপক কাঁদানে গ্যাস, জলকামান এবং রাস্তা অবরোধের মতো কৌশল নিয়েছে। রাজধানীজুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
সোমবার সকাল থেকেই শহরের কেন্দ্রে প্রবেশের সব সড়ক বন্ধ করে দেয় নিরাপত্তা বাহিনী। শহরের অনেক অংশ ফাঁকা হয়ে পড়ে। দোকানপাট বন্ধ এবং সাধারণ মানুষ পুলিশের চেকপোস্টে আটকে থাকায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়। অনেক স্কুল শিক্ষার্থীদের ঘরে থাকতে বলেছে প্রশাসন।
রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলো—যেমন প্রেসিডেন্ট ভবন ও পার্লামেন্ট ভবনের চারপাশে রেজার ওয়ায়ার দিয়ে কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। শহরের উপকণ্ঠ কিটেঙ্গেলা এবং থিকা রোড এলাকাতেও সংঘর্ষ হয়েছে। আগুন জ্বালিয়ে ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করলে পুলিশ পাল্টা কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে।
বিক্ষোভকারীদের দাবি—সুশাসন, পুলিশের জবাবদিহি, এবং সরকারি নিপীড়নের অবসান। ২৫ জুনের পূর্ববর্তী আন্দোলনে কমপক্ষে ১৯ জন নিহত হয় এবং শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লুট ও ধ্বংস হয়।
এই আন্দোলন ধীরে ধীরে সহিংস রূপ নিচ্ছে। নাগরিক সমাজ অভিযোগ করছে, কিছু ‘ভাড়া করা গুণ্ডা’ বিক্ষোভে ঢুকে বিশৃঙ্খলা ছড়াচ্ছে, যাদের সঙ্গে পুলিশের যোগসাজশ রয়েছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে। যদিও পুলিশ এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
রবিবার রাতে কেনিয়া হিউম্যান রাইটস কমিশনের (KHRC) অফিসে মোটরসাইকেলযোগে সশস্ত্র একদল লোক হামলা চালায়। সেসময় সেখানে নারীনেতৃত্বে একটি সংবাদ সম্মেলন চলছিল। হামলাকারীরা চিৎকার করে বলছিল, আজ কোনো বিক্ষোভ হবে না!" তারা লাঠি, পাথর নিয়ে এসে ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন ও সাংবাদিকদের মূল্যবান সামগ্রী ছিনিয়ে নেয়।
KHRC মুখপাত্র আর্নেস্ট কর্নেল জানান, ২৫ জনের মতো হামলাকারী আচমকা এসে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে। তারা ভয় দেখায় এবং সবকিছু লুট করে নিয়ে যায়।
নাইরোবির বাসচালক হাম্পফ্রে গুম্বিশি বলেন, “গত রাত সাড়ে ৮টায় রওনা হয়েছি শহরের উদ্দেশ্যে। এখনো শহরের বাইরে আটকে আছি। সাধারণ মানুষের কষ্ট দিন দিন বাড়ছে। সরকার যেন সংলাপে বসে এই পরিস্থিতির সমাধান করে।”
১৯৯০ সালের সাবা সাবা আন্দোলনের স্মরণে আয়োজিত এই আন্দোলন আজ এক নতুন মাত্রা পেয়েছে। ওই সময় একদলীয় শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে অংশ নিয়ে বহু মানুষ জীবন দিয়েছেন। এখন সেই দিনের স্মরণে তরুণ প্রজন্ম ফের সরকারের জবাবদিহিতা ও ন্যায়বিচার দাবি করছে।
যদিও দেশের অন্যান্য এলাকায় তুলনামূলক শান্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তবে রাজধানীতে বিক্ষোভ ও পুলিশের অবস্থান প্রমাণ করে—কেনিয়ায় গণতন্ত্র নিয়ে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।