এক সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস কাঁপানো ছাত্রলীগ নেতা, আজ কলকাতার নিন্মশ্রেণীর একটি হোটেলে ঘুমান চুয়িংগামের নিচে থাকা বিছানায়। ভাড়াটে ঘরে ভাগাভাগি করা টয়লেট, রাত্রে ঘুম ভেঙে যায় পোকামাকড়ের কামড়ে। এই রকমই বাস্তবতার বিবরণ উঠে এসেছে প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনের একটি ফেসবুক পোস্টে, যা শনিবার (২৪ মে) ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
ইলিয়াস হোসেন লিখেছেন, “খবরটা যখন ফেসবুকে দেখি তখন আমি কলকাতার একটা নিন্মশ্রেণীর হোটেলে শুয়ে আছি।” এরপর শুরু হয় এক ছাত্রনেতার করুণ ও নাটকীয় পালিয়ে বাঁচার কাহিনী।
তিনি জানান, ৫ আগস্টের ঘটনার পর তিনি বনানীতে এক বন্ধুর বাসায় তিন দিন আত্মগোপনে ছিলেন। সেই বন্ধু ছিল রাজনীতি-বিমুখ সাধারণ একজন মানুষ। “বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ভয় পেয়ে আমাকে ভাই ডাকতো,” স্মরণ করেন তিনি।
এরপর সীমান্ত পেরিয়ে কোনো রকমে কলকাতায় প্রবেশ করে তিনি শুরু করেন নতুন জীবনের সংগ্রাম। “বাড়ি-ঘর সব পুড়িয়ে দিয়েছে,” বলেন তিনি। একসময় সিএনজি চালকের ছেলে থেকে হয়ে উঠেছিলেন ডুপ্লেক্স বাড়ির মালিক, কিন্তু রাজনীতির পালাবদলে তা এক মুহূর্তেই বিলীন হয়ে যায়।
কলকাতায় পৌঁছানোর পর শুরু হয় তার জীবন যুদ্ধ। হাতে কিছু টাকা থাকলেও তা দিয়ে চলে মাত্র তিন মাস। এরপর কয়েকজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মিলে থাকতেন একটি ছোট্ট মেসে। মেসের অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে ১৫০০ টাকার রুমে পানির জন্য পর্যন্ত সংগ্রাম করতে হতো।
টাকা-পয়সার অভাবে তাকে এমনকি ভ্যানে করে অন্তর্বাস বিক্রিও করতে হয়েছিল, যা পুলিশ দেখে আটক করে। তবে রাজনৈতিক নেতার সহযোগিতায় ছাড়া পান তিনি। সেই নেতা তাঁকে ১০ হাজার টাকা দেন এবং বলেন, “আর মাত্র কয়টা দিন, সময় আসবে।”
কিন্তু বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। মেস মালিক জানিয়ে দেন, আর কোনো বাংলাদেশিকে রাখবেন না। বাধ্য হয়ে সেই টাকায় এক জীর্ণ হোটেলে ওঠেন। হোটেলে রাত কাটে ছাড়পোকার কামড়ে, যার বর্ণনা দিতে গিয়ে লেখকের গলায় আসে কান্না।
পোস্টে উঠে এসেছে ছাত্রনেতার মানসিক অবস্থা, হতাশা আর রাজনীতির নাটকীয় পরিবর্তনের প্রতিচ্ছবি। একটি ঘটনা তাকে দারুণ আশার আলো দেখিয়েছিল — খবর রটে ইউনুস পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন। এই খবরে দৌড়ে ছুটে যান নেতার কাছে। নেতা বলেন, “সিগন্যাল দিলেই ঢুকে যাব দেশে। ব্যাগ গোছাও।”
কিন্তু মাঝরাতে খবর আসে, ইউনুস পদত্যাগ করছেন না। সেই মুহূর্তে তার মন ভেঙে যায়। চুপচাপ জানালার পাশে দাঁড়িয়ে রাস্তায় তাকিয়ে থাকেন। রাস্তায় কিছু গাড়ি, কিছু তরুণী... আর জীবনের করুণ রূপ।
শেষে পোস্টে উঠে আসে তাঁর রাজনৈতিক হতাশা। “যাই, ফেইক আইডি থেকে ইউনুসকে টিটকিরি মারি,”— এভাবে নিজের ক্ষোভ ঝাড়েন তিনি। “পদত্যাগ তো করবে না। সুডখোরের সব নাটক।”
এই ফেসবুক পোস্ট শুধু একটি ব্যক্তির জীবনের গল্প নয়, বরং বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির নাটকীয় উত্থান-পতনের একটি দৃষ্টান্ত। এক সময় ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা এই নেতারা এখন অনেকে পলায়নপর, আবার কেউ হয়তো অপেক্ষায় — “সিগন্যাল দিলেই ঢুকে যাব দেশে।”
ইলিয়াস হোসেনের এই ফেসবুক পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র আলোড়ন তুলেছে। অনেকে মন্তব্য করেছেন— “এই পোস্ট শুধু রাজনৈতিক ইতিহাস নয়, এটি একটি নাট্যরূপক।” আবার অনেকে একে দেখছেন ছাত্ররাজনীতির অনিবার্য পরিণতির দলিল হিসেবে।