close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

জাতিসংঘের পরমাণু সংস্থার বিরুদ্ধে ‘কঠিন’ ব্যবস্থা নিল ইরান..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ইসরায়েলের হামলার পর ক্ষিপ্ত ইরান জাতিসংঘের পরমাণু সংস্থার প্রধানকে দেশে ঢুকতে না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। নজরদারি কার্যক্রমও সম্পূর্ণ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তেহরান।..

দীর্ঘ ১২ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘাত শেষে মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে সাময়িক যুদ্ধবিরতির ঘোষণা এলেও, এর রেশ এখনও কাটেনি। যুদ্ধের মূল কেন্দ্রবিন্দু—ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। আর এবার ইরান সরাসরি আঙুল তুলেছে জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএ-এর (IAEA) দিকে। শুধু অভিযোগ নয়, সংস্থাটির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপও নিয়েছে তেহরান।

রবিবার (১৫ জুন) ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি ঘোষণা করেন, এখন থেকে আইএইএ-এর প্রধান রাফায়েল মারিয়ানো গ্রোসিকে আর ইরানে ঢুকতে দেওয়া হবে না। তাছাড়া ইরানের যেকোনো পরমাণু স্থাপনায় নজরদারির জন্য ক্যামেরা বসানো বা তদারকি চালানোর সুযোগও সংস্থাটিকে আর দেওয়া হবে না।

এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময়ে এলো, যখন মাত্র কয়েকদিন আগেই ইরানের পার্লামেন্ট একটি নতুন আইন পাস করেছে— যেখানে বলা হয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত আইএইএ-এর সঙ্গে সকল প্রকার সহযোগিতা স্থগিত থাকবে।

বিগত ১৩ জুন শুরু হয় এক নজিরবিহীন সংঘাত। ইসরায়েল ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায় ইরানের সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনায়। হামলার মূল কারণ ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের দাবি— ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে।

ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এই হামলায় ৬০৬ জন নিহত এবং ৫,৩৩২ জন আহত হয়েছে। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইরানও ইসরায়েলের অভ্যন্তরে মিসাইল ও ড্রোন হামলা চালায়, যাতে ২৯ জন নিহত ও ৩,৪০০ জনের বেশি আহত হয় বলে জানিয়েছে হিব্রু ইউনিভার্সিটি অব জেরুজালেম।

এই ঘটনাগুলোর জেরে ইরান মনে করছে, আইএইএ বরাবরই পক্ষপাতদুষ্ট ভূমিকা পালন করেছে। সংস্থাটি ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে থেকে ইরানের ওপর অতিরিক্ত নজরদারি চালাতে চেয়েছে, অথচ ইসরায়েলের পরমাণু অস্ত্র নিয়ে কোন প্রশ্ন তোলেনি।

এদিকে আন্তর্জাতিক মহলে এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন এবং রাশিয়া—তিন দেশই ইতোমধ্যেই ইরানকে সংযত আচরণ করার অনুরোধ জানিয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও বিষয়টি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই নিষেধাজ্ঞা ও নজরদারি প্রত্যাহার ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে আরও অন্ধকারাচ্ছন্ন করে তুলবে। এতে মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক উত্তেজনা পুনরায় চরমে পৌঁছাতে পারে।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেন,আমরা আর কোনো পক্ষপাতদুষ্ট মনোভাবের সহ্য করবো না। আমাদের পরমাণু স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ করলে আমরা জবাব দিতে বাধ্য হবো।

তিনি আরও বলেন, আইএইএ ইরানকে যথেষ্ট অপমান করেছে এবং তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে একতরফাভাবে, যা একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়।

তেহরানের এই পদক্ষেপ বিশ্বরাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। একদিকে যুদ্ধবিরতির স্বস্তি, অন্যদিকে পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আন্তর্জাতিক অনিশ্চয়তা— সবমিলিয়ে মধ্যপ্রাচ্য এখনো ধোঁয়াশার মধ্যে। জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কীভাবে এই পরিস্থিতি সামাল দেয়, তা আগামী দিনগুলোতে স্পষ্ট হবে। তবে আপাতত এটি বলা যায়— ইরানের নিষেধাজ্ঞা কোনো সাধারণ বার্তা নয়, বরং এটি একটি সুস্পষ্ট হুঁশিয়ারি।

Nenhum comentário encontrado