জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস ২০২৫, এক নতুন সন্ধিক্ষণে বাংলাদেশের রাজনীতি..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার ভার্চুয়াল বার্তাগুলিতে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে কৌশলী সমালোচনা করেছেন।..

বাংলাদেশের ইতিহাসে এক তাৎপর্যপূর্ণ দিন, আজ পালিত হচ্ছে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস। আগস্ট ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থান বা ‘জুলাই বিপ্লব’-এর পর দেশে যখন একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কাঠামো ও জবাবদিহিতার এজেন্ডা নিয়ে কাজ করছে, তখন এই দিবসটি এক নতুন রাজনৈতিক বার্তা বহন করছে। ঐতিহ্যগতভাবে এই দিনটি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর জন্য সংহতি প্রদর্শন এবং শক্তি সঞ্চয়ের প্রধান মঞ্চ হলেও, ২০২৫ সালে এর তাৎপর্য আরও গভীর—কারণ জাতি এখন একটি খণ্ড-বিখণ্ড রাজনৈতিক বাজারে দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে আগামী ফেব্রুয়ারি ২০২৬ সালের নির্বাচনকে ঘিরে তৈরি হয়েছে চরম অনিশ্চয়তা।

জুলাই বিপ্লবের ফলে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনের অবসান এবং পরবর্তীতে মে ২০২৫-এ দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ায় যে বিশাল রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হয়েছে, তার প্রধান সুবিধাভোগী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে বিএনপি। দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি আজ সংহতি দিবসের মঞ্চকে কাজে লাগিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে, তারা কেবল ক্ষমতার উত্তরাধিকারী নয়, বরং একটি সুসংগঠিত রাজনৈতিক শক্তি।

দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার ভার্চুয়াল বার্তাগুলিতে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে কৌশলী সমালোচনা করেছেন। তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, পূর্ববর্তী সরকারের রেখে যাওয়া অর্থনৈতিক ধ্বংসের মধ্যেও জনগণের প্রত্যাশা বাড়ছে। তিনি বিশেষত জুলাই বিপ্লবে আহতদের সঠিক পুনর্বাসন ও চিকিৎসা নিশ্চিত না করার বিষয়টিকে রাজনৈতিক ইস্যু হিসেবে তুলে ধরেছেন, যা দলটিকে সাধারণ মানুষের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার একটি প্রচেষ্টা। দলের যুব ফ্রন্ট, যুব দল ও ছাত্র দলের মাধ্যমে রাজপথে বিশাল জমায়েত, যেমনটি সম্প্রতি ঢাকার নয়া পল্টনে দেখা গেছে, তা বিএনপির শক্তিশালী সাংগঠনিক সক্ষমতারই প্রমাণ দেয়।

ঐতিহাসিক সংহতি দিবসের প্রেক্ষাপট এবার ভিন্নমাত্রা পেয়েছে ‘জেন জি’ (Gen Z) বিপ্লবের নৈতিক শক্তির কারণে। ন্যাশনালিস্ট সিটিজেন’স পার্টি (এনসিপি) এবং গণ অধিকার পরিষদ (জিওপি)-এর মতো নবগঠিত, ছাত্র-নেতৃত্বাধীন দলগুলো এই সংহতি দিবসের আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

এনসিপি-এর নেতা নাহীদ ইসলাম এবং হাসনাত আবদুল্লাহ, যারা অভ্যুত্থানের নৈতিক কর্তৃত্ব বহন করেন, তারা জাতীয় আলোচনাকে নিছক ক্ষমতা বদলের বৃত্ত থেকে বের করে এনে কাঠামোগত সংস্কারের দিকে চালিত করেছেন। তাদের ক্রমাগত চাপ জিআই এবং এমনকি বিএনপি-কেও তাদের প্ল্যাটফর্মে সংস্কারপন্থী বক্তব্য যুক্ত করতে বাধ্য করেছে। এই তরুণ নেতৃত্ব এখন শহুরে এবং বুদ্ধিজীবী মহলে প্রভাব বিস্তার করলেও, তাদের প্রাথমিক দুর্বলতা হলো গ্রামীণ পর্যায়ে সুসংগঠিত অবকাঠামোর অভাব।

নভেম্বর ২০২৫-এর রাজনৈতিক ল্যান্ডস্কেপের সবচেয়ে বড় সত্য হলো ভোটারদের চরম অস্থিরতা। জুলাইয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ জনমত জরিপ অনুসারে, প্রায় ৪৯ শতাংশ ভোটার এখনও সিদ্ধান্তহীন। অক্টোবর ২০২৪-এর জরিপের তুলনায় এই সংখ্যা অনেক বেশি, যা নির্দেশ করে যে জাতি অতীতের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় গভীরভাবে সন্দিহান এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি বিশ্বাসযোগ্য প্রতিশ্রুতি খুঁজছে। বিশেষ করে নারী ভোটারদের মধ্যে এই সিদ্ধান্তহীনতা (৫৫%) আরও বেশি।

এই বিশাল সংখ্যক সিদ্ধান্তহীন ভোটাররা আসন্ন নির্বাচনে নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করবে। কোনো একক দলই বর্তমানে নিশ্চিত সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার অবস্থানে নেই।

সামগ্রিক বিশ্লেষণ ইঙ্গিত দেয় যে, বিএনপি সবচেয়ে শক্তিশালী একক দল হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তবে সরকার গঠনের জন্য বাংলাদেশ জামায়াত-ই-ইসলামী-এর সাংগঠনিক দক্ষতা ও আসন নিশ্চিত করার সক্ষমতা অপরিহার্য হয়ে উঠবে। জামায়াত, আদালতের নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ছাত্র শিবিরের মাধ্যমে ব্যাপক সাফল্য লাভ করে তাদের সাংগঠনিক শক্তি প্রদর্শন করেছে।

জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের এই দিনে, বাংলাদেশের রাজনীতি কার্যত এক জোটবদ্ধ পরীক্ষার দ্বারপ্রান্তে। সামনের নির্বাচন কেবল দলগুলোর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়, বরং ভিন্ন ভিন্ন আদর্শ—জাতীয়তাবাদ (বিএনপি), ইসলামপন্থা , এবং সংস্কারপন্থা (এনসিপি)—এর মধ্যে একটি টেকসই রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার দিকে জাতিকে চালিত করবে। স্থিতিশীলতা নির্ভর করছে বিজয়ী দলগুলো অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার এজেন্ডাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কতটা কার্যকরভাবে একটি ভঙ্গুর জোট গঠন করতে পারে তার ওপর।

No se encontraron comentarios


News Card Generator