close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

জাতীয় পার্টিতে অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ! জি এম কাদেরের হুঁশিয়ারি: “নীতি ছাড়ব না, প্রয়োজনে রাজনীতি ছেড়ে দেব”..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
২৮ জুন জাতীয় পার্টির সম্মেলনকে ঘিরে শুরু হয়েছে তীব্র উত্তেজনা ও বিভক্তি। দলের একাংশ সম্মেলনের তোড়জোড় করলেও চেয়্যারম্যান জি এম কাদের আপসহীন অবস্থানে অনড়। অভ্যন্তরীণ কোন্দল, গঠনতন্ত্র পরিবর্তন ও নেতৃত্ব..

জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে আবারও দেখা দিয়েছে প্রচণ্ড রকমের টানাপোড়েন, যার কেন্দ্রবিন্দু ২৮ জুনের প্রস্তাবিত কেন্দ্রীয় সম্মেলন। এই সম্মেলন আয়োজনকে ঘিরে দলের ভেতরে ভাঙনের সুর যেমন শোনা যাচ্ছে, তেমনি নেতৃত্ব বদলের পদক্ষেপ নিয়েও তীব্র মতবিরোধে জড়িয়েছে দুই পক্ষ। আর পুরো পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে এক অনড় অবস্থানে রয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের।

দলের একাংশ এই সম্মেলন সফল করতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নেতাদের ঢাকায় আনানোর কাজ চলছে পুরোদমে। সম্মেলন আয়োজনের অন্যতম উদ্যোক্তা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ইতোমধ্যে সংগঠনের সাবেক ও বর্তমান অনেক নেতাকে একত্রিত করেছেন। তাঁদের লক্ষ্য, দলকে একক নেতৃত্বের বাইরে এনে যৌথ নেতৃত্বে পরিচালিত করা।

সম্মেলন হবে রাজধানীর কাকরাইলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেই—এমন প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যদিও এখনো প্রশাসনের অনুমতি মেলেনি, তবে আয়োজকদের আশা, রোববারের মধ্যে অনুমতি পেলে প্রেক্ষাপটই বদলে যাবে।

সম্মেলনকে ঘিরে সারাদেশেই জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভক্তি স্পষ্ট। কে থাকবেন নেতৃত্বে, গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন আসবে কি না—এসব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে দলের তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত।

এই অবস্থায় জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি এসব তৎপরতাকে গুরুত্ব দেন না। স্পষ্ট ভাষায় তাঁর ঘোষণা—তিনি কোনো আপসে যাবেন না।

জি এম কাদের বলেন,-ওনাদের সঙ্গে আমি আর রাজনীতি করতে চাই না। তাঁরা শেখ হাসিনার সময়েও অনেক যন্ত্রণা দিয়েছেন, আবার এখনো সেটি শুরু করেছেন। তারা যা ইচ্ছা করুক। প্রয়োজনে রাজনীতি ছেড়ে দেব, কিন্তু নীতি ছাড়ব না।

জাপার গঠনতন্ত্রের ২০ ধারার (ক) উপধারাটি নিয়েই মূল বিতর্ক। এই ধারায় চেয়ারম্যানের হাতে একক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে—যেকোনো পদে নিয়োগ, অপসারণ ও স্থলাভিষিক্ত করার ক্ষমতা। এখন সেই ধারা বদলের দাবি উঠেছে।

দলের জ্যেষ্ঠ নেতা রুহুল আমিন হাওলাদার বলছেন,-আমরা কাউকে নেতৃত্ব থেকে সরাতে চাই না। চেয়ারম্যান পদে যিনি আছেন, থাকুন। কিন্তু দলে গণতন্ত্র ও যৌথ নেতৃত্ব নিশ্চিত করতে চাই।”

অন্যদিকে জি এম কাদের এ প্রস্তাবকে নিজের হাত-পা বেঁধে দেওয়ার অপচেষ্টা হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেছেন,-আমি পরিশ্রম করব, দায়-অভিযোগ আমার ওপর, কিন্তু সুবিধা নেবেন ওনারা—এটা হতে পারে না।”

চেয়ারম্যান জি এম কাদের আনুষ্ঠানিকভাবে ২৮ জুনের সম্মেলন স্থগিত করেছেন। চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের হল বরাদ্দ বাতিলের কারণ দেখিয়ে তিনি এ ঘোষণা দেন। কিন্তু তা থামায়নি বিদ্রোহী অংশকে। বরং তাঁরা দলীয় কার্যালয়ের সামনেই সম্মেলন করার ঘোষণা দিয়েছেন।

এই সম্মেলন ঘিরেই আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে দুটি শক্ত ধারা—একটি জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন, অপরটি সম্মেলন উদ্যোক্তাদের নিয়ে গঠিত। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, অনেকেই বলছেন দল ভাঙার মতো দুঃসময়ের দিকে এগোচ্ছে।

জাতীয় পার্টির শুভাকাঙ্ক্ষীরা মনে করছেন, এখন বিভক্তি নয়, বরং বাস্তবভিত্তিক রাজনৈতিক কৌশল প্রয়োজন। এ পরিস্থিতিতে ভেতর থেকে একটি প্রস্তাব উঠেছে—জি এম কাদের চেয়ারম্যান পদে থেকে যাবেন, কিন্তু আনিসুল ইসলাম মাহমুদ হবেন নির্বাহী চেয়ারম্যান এবং রুহুল আমিন হাওলাদার হবেন মহাসচিব। যৌথ নেতৃত্বে দল চালিয়ে যাওয়া হবে।

তবে এখানেও আছে বাধা। দলের ভেতরে একটি অংশ বিশ্বাস করে, অতীতে এই নেতাদের কার্যক্রমে অনেক নেতাই ক্ষুব্ধ। ফলে নেতৃত্বে তাঁদের প্রত্যাবর্তন সহজ হবে না।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে জাতীয় পার্টি কার্যত দ্বিধাবিভক্ত এক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। একদিকে রয়েছে চরম আত্মবিশ্বাসী জি এম কাদের, যিনি প্রয়োজনে রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণাও দিয়েছেন। অপরদিকে, দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের একটি অংশ গঠনতন্ত্র বদলে দল পুনর্গঠনের আহ্বান জানাচ্ছেন।

এখন দেখার বিষয়, এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে দলটি আদৌ ঐক্য ধরে রাখতে পারবে কিনা, নাকি সামনে অপেক্ষা করছে আরেকটি ভাঙনের ধাক্কা।

২৮ জুনের সম্মেলন হবে কি না, তা সময়ই বলবে। তবে নিশ্চিতভাবে বলা যায়—জাতীয় পার্টির ভেতরে এই মুহূর্তে বড়সড় একটি ভূমিকম্প অপেক্ষা করছে, যার পরিণতি হতে পারে দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক পালাবদল।

Ingen kommentarer fundet


News Card Generator