শনিবার (৩১ মে) রংপুরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ব্যক্তিগত বাসভবনে হামলা এবং তার দলের নেতাকর্মীদের মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটলে রাজনৈতিক উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়।
এ ঘটনায় রংপুর মহানগরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়কসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় তাদের নাম উল্লেখ করে দায়ী করা হয় জাতীয় পার্টির ওপর হামলার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের জন্য। এতে দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়ে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের জিজ্ঞাসাবাদ
ঘটনার পর পরই যৌথবাহিনীর সদস্যরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। শনিবার রাতে রংপুর নগরীর পায়রা চত্বরে এই জিজ্ঞাসাবাদ চলে।
বিষয়টি জানাজানি হলে রাত প্রায় দেড়টার সময় প্রবল বৃষ্টির মধ্যেও ঘটনাস্থলে ছুটে যান জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। উপস্থিত থেকে তিনি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর সরেজমিনে নজর রাখেন এবং সংগঠনের কর্মীদের পাশে থাকার বার্তা দেন।
এনসিপি’র হুঁশিয়ারি: “আশ্রয় দিলেই প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে”
পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন শনিবার গভীর রাতে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একটি কড়া বিবৃতি প্রকাশ করেন।
তিনি লিখেন, “দেশের মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে গৃহপালিত বিরোধীদলের মুখোশ পরে গণতন্ত্র হত্যা করে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে ঘৃণ্য ভূমিকা পালন করছে জাতীয় পার্টি। তারা রংপুরের পরিস্থিতি উত্তপ্ত করছে। এই জাতীয় পার্টিকে যে বা যারাই আশ্রয় দেবে, বৈষম্যবিরোধী সংগ্রামীদের ওপর হাত তুলবে—তাদের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। ইনকিলাব জিন্দাবাদ।”
আখতারের এই বক্তব্য সামাজিক মাধ্যমে তাৎক্ষণিক আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে সংঘাতের ইঙ্গিত দেয়।
রাজনৈতিক সংকট আরও জটিল দিকে?
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এনসিপি ও জাতীয় পার্টির মধ্যে এই দ্বন্দ্ব উত্তরাঞ্চলের রাজনীতিকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। দুই পক্ষই নিজেদের অবস্থানে অনড় এবং সংঘাতের পথে এগোচ্ছে বলে আভাস মিলছে।
জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, তারা রাজনৈতিকভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অপরদিকে, এনসিপি বলছে—গণতন্ত্রের নামে প্রহসন করে যারা ফ্যাসিবাদকে টিকিয়ে রাখতে ভূমিকা রাখছে, তাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।
রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে যখন বিভিন্ন দল সংলাপের মাধ্যমে সমাধানের আহ্বান জানাচ্ছে, তখন রংপুরে জাতীয় পার্টি বনাম এনসিপি বিরোধ রাজনৈতিক উত্তেজনাকে আরও জটিল ও সংঘাতমুখী করে তুলছে। পরিস্থিতি অবনতি রোধে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে সংযম ও দায়িত্বশীল আচরণের আহ্বান জানিয়েছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।