নির্বাচন কমিশনের খসড়া প্রস্তাবে বাগেরহাটের একটি আসন বাতিলের সিদ্ধান্তকে ষড়যন্ত্র বলে দাবি করে ঢাকায় বিক্ষোভে ফেটে পড়েন বাগেরহাটবাসী। চারটি আসন পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন রাজনৈতিক নেতারা
রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে উত্তাল বিক্ষোভে ফেটে পড়েন বাগেরহাট জেলার নাগরিক ও সর্বদলীয় নেতারা। নির্বাচন কমিশনের খসড়া প্রস্তাবে বাগেরহাটের একটি সংসদীয় আসন কমিয়ে তা তিনটিতে রূপান্তরের প্রস্তাব দেওয়ায় এই বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়।
৭ আগস্ট বৃহস্পতিবার দুপুরে আয়োজিত এই মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষস্থানীয় নেতা, পেশাজীবী, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। তারা সবাই “বাগেরহাটের চারটি আসন চাই” স্লোগানে এক কণ্ঠে আওয়াজ তোলেন।
বক্তারা অভিযোগ করেন, নির্বাচন কমিশন বাগেরহাট-৩ আসন, যা রামপাল ও মোংলা উপজেলা নিয়ে গঠিত, সেটি বিলুপ্ত করে তা বাগেরহাট-২ ও বাগেরহাট-৪-এর সঙ্গে যুক্ত করার যে পরিকল্পনা করছে, তা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও অবিচারমূলক। এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে জেলার জনগণ তাদের প্রাপ্য সাংবিধানিক প্রতিনিধিত্ব থেকে বঞ্চিত হবেন বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
আয়োজক সংগঠন সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির নেতা মেহেদী হাসান মিঠু তার বক্তব্যে স্পষ্টভাবে বলেন, “বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৬৩টির আসন অপরিবর্তিত রেখে শুধু বাগেরহাটের একটি আসন কমানো হচ্ছে—এটা কীভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে? এটা কোনো দলের দাবি নয়, এটা জনগণের অধিকার। আমরা বরং দাবি করছি, বাগেরহাটে পাঁচটি আসন হওয়া উচিত—সদর উপজেলাকে আলাদা করে, বাকি আটটি উপজেলাকে চার ভাগে বিভক্ত করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। তা না হলে আমরা কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবো। আজকের মানববন্ধন থেকেই আমরা স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছি—বাগেরহাটের আসন সংখ্যা হ্রাস মানে আমাদের প্রতিনিধিত্বের ওপর সরাসরি আঘাত।”
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক শামীমুর রহমান আরও কড়া ভাষায় হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “ইসিকে সরাসরি বলে দিতে চাই—আগুন নিয়ে খেলবেন না। বাগেরহাটবাসী এই অন্যায় ও অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত মেনে নেবে না। আপনারা যা করছেন, তা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা।”
বাগেরহাট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এ টি এম আকরাম হোসেন, বিএনপি নেতা ফরিদুল ইসলাম, ওয়াহিদুজ্জামান দীপু, শেখ মুজিবুর রহমান, খাদেম নেয়ামুল, খান মনিরুল ইসলাম এবং জামায়াতের বাগেরহাট জেলা আমির মাওলানা রেজাউল করিমও এই মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন।
তারা বলেন, এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ—বাগেরহাটকে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। অথচ দেশের অনেক উপজেলায় যেখানে মাত্র একটি উপজেলা নিয়েই আসন রয়েছে, সেখানে বাগেরহাটের মতো জনবহুল ও বৃহৎ জেলার আসন সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া চরম বৈষম্য।
সাবেক সিনিয়র সচিব এবং বাগেরহাটের কৃতী সন্তান ফরিদুল ইসলাম বলেন, “এটি কোনো আবদার নয়, এটি আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। আমরা বঞ্চিত হতে চাই না। আমরা আমাদের ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব চাই, যে অধিকার সংবিধানে স্বীকৃত।”
বক্তারা নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে আলটিমেটাম দিয়ে বলেন, “আগামী ১০ আগস্টের মধ্যে এই খসড়া বাতিল করে বাগেরহাটের চারটি আসন পুনর্বহাল করতে হবে। অন্যথায় আমরা রাজপথে আরও কঠোর কর্মসূচির ডাক দেব।”
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী জনসাধারণের মুখে একটি কথাই শোনা যাচ্ছিল—“বাগেরহাট বাঁচাতে আসন বাঁচাও।”
এই প্রতিবাদ শুধু একটি জেলার নয়, বরং গোটা দেশের রাজনৈতিক সমতার প্রশ্ন তুলে দিল। নির্বাচন কমিশন যদি জনগণের দাবির প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হয়, তবে যে কোনো পরিস্থিতির জন্য তাদেরই দায় নিতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন বক্তারা।