বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানা বলেছেন, বাংলাদেশে যারা ভারতপন্থী শাসন দেখতে চায়, তারাই আসলে দেশের রাজনীতিতে অস্থিতিশীলতা ও বিভেদের বীজ বপন করছে। তিনি অভিযোগ করেন, এই গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে বিএনপিকে ভারতপন্থী দল হিসেবে প্রমাণ করতে চায়, যাতে তারা রাজনৈতিকভাবে ফায়দা লুটতে পারে এবং জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে দিতে পারে।
সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশো অনুষ্ঠানে ‘বিএনপিকে ভারতপন্থী দল প্রমাণ করে কার লাভ?’—এই প্রশ্নের জবাবে রুমিন ফারহানা বলেন, “যারা বাংলাদেশে ভারতপন্থী শাসন দেখতে চায়, তারা বিএনপিকে ভারতপন্থী দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে চায়। যত বেশি বিদ্বেষ ও ঘৃণার পরিবেশ তৈরি করা যাবে, ততই গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথ রুদ্ধ হবে। এতে জনগণ তাদের প্রকৃত প্রতিনিধিকে নির্বাচনের সুযোগ হারাবে এবং অনির্বাচিত সরকার ব্যবস্থার ঝুঁকি আরও বাড়বে।”
তিনি আরও বলেন, “যখন দেশে অস্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পায়, তখনই ভারতের বাংলাদেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ বাড়ে। আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আওয়ামী লীগ তাদের রাজনৈতিক অবস্থান আরও মজবুত করতে পারে।”
রুমিন ফারহানা দাবি করেন, আওয়ামী লীগের প্রথম দিকে এক ধরনের ভয় ও বিভ্রান্তি কাজ করেছিল। তারা বুঝতে পারছিল না কীভাবে পরিস্থিতি সামলাবে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা অন্য রাজনৈতিক দলের সহায়তায় পরিস্থিতিকে নিজেদের অনুকূলে নিয়ে এসেছে। এখন দেখা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগের মিছিল শুধু দৈর্ঘ্যেই নয়, প্রস্থেও বড় হচ্ছে—যা এক ধরনের মব রাজনীতির দৃষ্টান্ত তৈরি করছে।
তিনি সতর্ক করে বলেন, “যারা চায় বাংলাদেশে ভারতের কঠোর নজরদারির মধ্যে একটি ভারত সমর্থিত সরকার টিকে থাকুক, তারাই মূলত দেশকে বিভক্ত ও অস্থিতিশীল রাখার ষড়যন্ত্র করছে। তারা চায় বাংলাদেশে অনৈক্য, ভয়, ঘৃণা ও সন্দেহের পরিবেশ স্থায়ী হোক—যাতে গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, রুমিন ফারহানার এই বক্তব্য বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করে। তিনি ইঙ্গিত করেছেন, বিদেশি প্রভাব এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কৌশল—দুটির মিশ্রণই এখন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভারসাম্যকে নষ্ট করছে।
এই প্রসঙ্গে বিএনপির একটি সূত্র জানায়, দলটি এখন দেশে একটি গণতান্ত্রিক ও স্বচ্ছ নির্বাচন চায়, যেখানে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত হবে। কিন্তু যারা বিদেশি প্রভাবের মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়, তারা ইচ্ছাকৃতভাবে সংঘাত, বিভেদ ও সহিংসতা উসকে দিচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পথ রুদ্ধ করার চেষ্টা যত বাড়বে, ততই দেশে বিদেশি প্রভাব এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পাবে। আর এই অস্থিতিশীলতার সুযোগে নির্দিষ্ট কিছু গোষ্ঠী তাদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাবে।
রুমিন ফারহানা তার বক্তব্যে শেষে বলেন, “বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে জনগণ—না যে বিদেশি প্রভাব, না কোনো অগণতান্ত্রিক শক্তি। আমরা চাই একটি এমন বাংলাদেশ, যেখানে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার এবং স্বাধীন চিন্তা বিকশিত হবে।