বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ২০২৩ সালের জুলাই-আগস্টে অনুষ্ঠিত ‘গণঅভ্যুত্থান’ আন্দোলনের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে এক মাসব্যাপী বিশাল কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার শনিবার (২৮ জুন) দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
তিনি জানান, এই কর্মসূচির মাধ্যমে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো, আহতদের স্মরণ, আন্দোলনের মূল চেতনা তুলে ধরা এবং জাতিকে আবারও সেই গণজাগরণের পথে আহ্বান করাই মূল লক্ষ্য।
ঘোষিত কর্মসূচির বিস্তারিত সময়সূচি:
১ জুলাই
গণঅভ্যুত্থানে শহীদ, আহত ও পঙ্গুত্ববরণকারীদের স্মরণে দেশজুড়ে শাখা পর্যায়ে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। একইসঙ্গে গোলাম পরওয়ার জানিয়েছেন, “সকল ইসলামী শক্তির মধ্যে একটি ঐক্য গড়ে তুলতে যাচ্ছে জামায়াত।”
২-৪ জুলাই
দরিদ্র, অসহায়, দুস্থ ও এতিমদের মাঝে খাবার বিতরণ করবে জামায়াতে ইসলামী। এতে অংশ নেবেন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারাও।
৮-১৫ জুলাই
আন্দোলনে শহীদ ও আহত নেতাকর্মীদের পরিবারের সঙ্গে দেখা, মতবিনিময় এবং দোয়া কর্মসূচি পালিত হবে বিভিন্ন এলাকায়।
১৬ জুলাই
শহীদ আবু সাঈদের স্মরণে রংপুরে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল।
১৯ জুলাই
দুটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে:
ক) ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হবে বিশাল জাতীয় সমাবেশ।
খ) শহীদ পরিবার কর্তৃক আয়োজিত স্মরণ অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন আমিরে জামায়াত।
২০-২৪ জুলাই
আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ও জনগণের প্রত্যাশা তুলে ধরতে হবে সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামের মাধ্যমে। এতে অংশ নেবেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক, গবেষক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি।
২৫-২৮ জুলাই
জুলাই-আগস্ট আন্দোলন নিয়ে নির্মিত ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে বিভিন্ন স্থানে।
২৯-৩০ জুলাই
মহিলা ও ছাত্র সংগঠনের উদ্যোগে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে নারীদের অংশগ্রহণে।
১ আগস্ট
শহীদ স্মারকের ইংরেজি ও আরবি অনুবাদ প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত জাতীয় সেমিনারে দেশের বুদ্ধিজীবী ও গবেষকগণ উপস্থিত থাকবেন।
১-৩ আগস্ট
ছাত্রদের উদ্যোগে গণআন্দোলনের ছবি নিয়ে আলোকচিত্র প্রদর্শনী হবে বিশ্ববিদ্যালয় ও জেলা শহরগুলোতে।
৫ আগস্ট
সারা দেশে একযোগে গণমিছিল এবং রাষ্ট্রীয় কর্মসূচিতে জামায়াতের সক্রিয় অংশগ্রহণ।
৬-৮ আগস্ট
সাংবাদিক, চিকিৎসক, আইনজীবী, শিক্ষক, প্রকৌশলী ও আলেম-ওলামাদের নিয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে ইসলামপন্থী আন্দোলনের ভবিষ্যৎ পথনির্দেশনা নিয়ে আলোচনা হবে।
জামায়াতে ইসলামীর এই মাসব্যাপী উদ্যোগকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দেখছেন একটি নতুন কৌশলী আন্দোলনের অংশ হিসেবে। দলটি শুধু শহীদ স্মরণে সীমাবদ্ধ না থেকে, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নিজেদের অবস্থান পুনর্গঠন ও জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর চেষ্টা করছে।
জামায়াতে ইসলামীর এই কর্মসূচিগুলো আগামী দিনে দলটির রাজনৈতিক কার্যক্রমে গতি আনবে কি না, তা এখনই বলা কঠিন। তবে নিশ্চিতভাবেই বলা যায়—এটি তাদের রাজনৈতিক মাঠে ফেরার একটি সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টা।