বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বহুল আলোচিত একটি ইস্যু আবারও সামনে এসেছে—যুদ্ধাপরাধ ও জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা। এবার সেই বিতর্কের কেন্দ্রে উঠে এসেছেন একজন শিক্ষাবিদ, যিনি দেশের বাইরের একজন একাডেমিক হলেও দেশের ইতিহাস, বিচার ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিত নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই মত প্রকাশ করে আসছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বার্ড কলেজের সেন্টার ফর এক্সপেরিমেন্টাল হিউম্যানিটিজের ভিজিটিং অধ্যাপক ফাহমিদুল হক মঙ্গলবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দেন, যা মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এবং বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে।
তার পোস্টে উল্লেখ করা হয়—
“ভারত মুক্তিযোদ্ধাদের ড্রাগ খাইয়ে পাকিস্তানি সেনাদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছিল! জামায়াতে ইসলামীর কেউ যুদ্ধাপরাধ করেনি।”
এই মন্তব্য অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য ও বিতর্কিত বলে প্রতীয়মান হলেও, কিছু অংশে তা ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ হিসেবেও দেখা হচ্ছে। পোস্টটির নিচে একজন পাঠক, তাইফ আহমেদ, ব্যঙ্গ করে মন্তব্য করেন—
“যুদ্ধাপরাধ প্রমাণে এত মিথ্যা স্বাক্ষ্য জোগাড় করা, সেটিও নিশ্চয়ই ড্রাগের প্রভাব?”
অধ্যাপক ফাহমিদের বক্তব্যের পেছনে সময়টিও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ঠিক একই দিনে আপিল বিভাগ জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষস্থানীয় নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামকে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় খালাস দিয়েছেন।
এই রায়ের ফলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ড বাতিল হয়ে যায়। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম ঘটনা যেখানে একজন যুদ্ধাপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি আপিল বিভাগে খালাস পেলেন।
এই ঐতিহাসিক রায়ের ঘোষণা করেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ-এর নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বেঞ্চ।
◼️ রায়ের প্রভাব ও আইনজীবীদের মন্তব্য
রায় ঘোষণার পর আসামিপক্ষের আইনজীবী শিশির মনির বলেন—
“এই মামলার আগের রায়ে শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো ভারতীয় উপমহাদেশের ফৌজদারি বিচার পদ্ধতি বদলে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। সেটা ছিল এক ভয়ানক ভুল।”
তিনি আরও যোগ করেন,
“আদালতের সামনে উপস্থাপিত সাক্ষ্যপ্রমাণের কোন বিশ্লেষণ ছাড়াই এই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। এটিই ছিল বিচারের নামে অবিচার।”
অধ্যাপক ফাহমিদের বক্তব্য এবং আপিল বিভাগের রায়—দুইয়ে মিলে রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে উত্তাপ ছড়িয়েছে।
যেখানে একদিকে এটি জামায়াতের রাজনৈতিক পুনর্বাসনের সম্ভাবনার ইঙ্গিত বলেও দেখা হচ্ছে, অন্যদিকে কেউ কেউ বলছেন—এই ধরনের বক্তব্য ও রায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং বিচারিক ধারাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
নানা পক্ষ থেকে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, জামায়াতের নেতারা যদি নির্দোষ হন, তবে বিগত এক দশকে সংঘটিত বিচার প্রক্রিয়ার বৈধতা কী?
একদিকে যখন দেশের সর্বোচ্চ আদালত যুদ্ধাপরাধের রায়ে পরিবর্তন এনে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে, অন্যদিকে দেশের বাইরের একজন অধ্যাপক সেই রায়কে যেন আরও একধাপ এগিয়ে নিজের বক্তব্যে যুদ্ধাপরাধের অস্তিত্বই অস্বীকার করছেন।
এটি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ইতিহাস, রাজনীতি এবং বিচার ব্যবস্থাকে ঘিরে নতুন এক বিতর্কের সূচনা করেছে—যার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদে অনুভূত হবে।



















