close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

জা'মা'য়া'ত নেতাদের ওপর লা'ঠি'পে'টা'র ভিডিও ভাইরাল, থানা ছাড়লেন ওসি..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
জামায়াত নেতাদের ওপর লাঠিপেটার ভিডিও ভাইরাল, থানা ছাড়লেন ওসি

১৩ বছর আগের এক বিতর্কিত পুলিশি লাঠিপেটার ভিডিও আবারো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে। ফলস্বরূপ, জয়পুরহাট জেলার ক্ষেতলাল থানার সদ্যযোগদানকৃত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসমত আলী গোপনে থানা ত্যাগ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

জানা যায়, ২০১২ সালের ৫ নভেম্বর জয়পুরহাট শহরে জামায়াতে ইসলামীর আয়োজনে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। ওই সময় আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মুক্তির দাবিতে হাজারো নেতা-কর্মী রাজপথে নামে। মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে জয়পুরহাট সদর থানার তৎকালীন এসআই হাসমত আলীর নেতৃত্বে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এতে জামায়াতের তৎকালীন জেলা সেক্রেটারি অধ্যাপক নজরুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হন। একই ঘটনায় পুলিশের গুলিতে ছাত্রশিবিরের সদস্য বদিউজ্জামান মারা যান।

দীর্ঘ এক যুগ পর, ২০২৫ সালের ১৩ জুন হাসমত আলী পদোন্নতি পেয়ে ক্ষেতলাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব নেন। কিন্তু দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র ১২ দিন পর, ২৫ জুন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয় ২০১২ সালের সেই ভয়াবহ লাঠিপেটার দৃশ্য। ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যায়, পুলিশের এসআই হাসমত আলী নিজ হাতে মিছিলের সামনে থাকা নেতাকর্মীদের ওপর চরমভাবে লাঠিচার্জ করছেন। সেই ভিডিও রাতারাতি ছড়িয়ে পড়ে, এবং জনমনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।

এমন পরিস্থিতিতে পরদিন সকালে ওসি হাসমত আলী চুপিসারে থানা ত্যাগ করেন। বিষয়টি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যখন স্থানীয় জামায়াত নেতৃবৃন্দ তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অভিযোগ তোলেন। জেলা জামায়াতের বর্তমান সেক্রেটারি মাওলানা গোলাম কিবরিয়া মন্ডল জানান, “আমরা কখনো ভুলিনি কিভাবে অধ্যাপক নজরুল ইসলাম স্যারের ওপর প্রকাশ্যে লাঠিপেটা হয়েছিল। সেই সময় আমাদের একজন ভাই শহীদ হয়েছিলেন। এখন সেই ব্যক্তিই যদি ওসি হয়ে ফিরে আসেন, তা মেনে নেওয়া যায় না।”

তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে থানাছাড়া হওয়ার কারণকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। জয়পুরহাট জেলা পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আবদুল ওয়াহাব বলেন, “ওসি হাসমত আলীকে সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে।”

এদিকে বুধবার রাতে ওসি হাসমত আলীর অফিসিয়াল মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ফোন রিসিভ করেন ক্ষেতলাল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এসএম কামাল। তিনি জানান, “ওসি সাহেব সকালে ফোনসহ দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে চলে গেছেন। জানিয়েছেন, তিনি পুলিশ সুপারের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে বাড়িতে যাবেন।”

তবে পুরো ঘটনার সময় ও হঠাৎ বিদায় নেওয়ার প্রেক্ষাপট, বিশেষ করে ভিডিও ভাইরালের পরপরই ওসি’র হঠাৎ ‘বিলুপ্তি’, প্রশাসনিক ব্যাখ্যাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।

স্থানীয়রা বলছেন, “এটা শুধু দায়িত্ব হস্তান্তর নয়, এটা এক ধরনের গোপন পালিয়ে যাওয়া। ভিডিও ভাইরালের পর হঠাৎ করে থানার প্রধানের এমন আচরণ সন্দেহজনক।”

১৩ বছর আগে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার ভিডিও যখন বর্তমানের একজন পুলিশ কর্মকর্তার ক্যারিয়ার চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেয়, তখন এটি কেবল সামাজিক মিডিয়ার শক্তি নয়, বরং ন্যায়ের দাবিতে জনসচেতনতারও বাস্তব উদাহরণ হয়ে ওঠে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিষয়টিকে সরল বদলি বলে দেখানো হলেও জনমনে তৈরি হওয়া প্রশ্নের জবাব এখনও মেলেনি।

কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি