বিশ্ব রাজনীতির উত্তাল মঞ্চে আবারও ইরানকে ঘিরে নাটকীয় মোড়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ এক ঘোষণায় জানালেন, ইরান তার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম সরিয়েছে—এমন কোনো গোয়েন্দা তথ্য তাঁর হাতে নেই। অথচ গোটা বিশ্বের চোখ এখন মধ্যপ্রাচ্যে। কারণ, মাত্র কয়েকদিন আগেই যুক্তরাষ্ট্র ভয়ঙ্কর ‘বাংকার-বাস্টার’ বোমা ব্যবহার করে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় ভয়াবহ হামলা চালায়।
৩০ হাজার পাউন্ডের এক ডজনের বেশি বোমা ফেলা হয়, লক্ষ্য ছিল স্পষ্ট—ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে স্থবির করে দেওয়া। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভাষ্য অনুযায়ী, এসব হামলা “পুরোপুরি সফল” এবং “স্থাপনাগুলো ধ্বংস করা হয়েছে।”
হেগসেথ সংবাদ সম্মেলনে জানিয়ে দিলেন, "আমি এমন কোনো তথ্য জানি না যা বলছে ইউরেনিয়াম সরিয়ে ফেলা হয়েছে।" তবে বিশ্লেষকরা এত সহজে বিষয়টি মেনে নিতে নারাজ। ম্যাক্সার টেকনোলজিসের স্যাটেলাইট ছবি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ফোর্দো পারমাণবিক স্থাপনার এক প্রবেশপথের বাইরে অস্বাভাবিক যানবাহনের জটলা। প্রশ্ন উঠছে, সেখানে কি আগে থেকেই ইউরেনিয়াম সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল?
রয়টার্সকে দেয়া এক জ্যেষ্ঠ ইরানি সূত্রের দাবি, হামলার আগেই ৬০ শতাংশ মাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের বেশিরভাগ অংশ নিরাপদ স্থানে সরিয়ে ফেলা হয়। এর মানে, যুক্তরাষ্ট্রের আক্রমণ হয়তো স্থাপনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, কিন্তু ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সামর্থ্য অক্ষতই রয়েছে!
ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়ায় জানান, “ফোর্দো স্থাপনায় হামলার সময় বাইরে থাকা গাড়ি-ট্রাক ছিল নির্মাণকর্মীদের, যাঁরা টানেল ঢাকার কাজ করছিলেন। কিছুই সরানো হয়নি।”
কিন্তু এমন দাবি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিশ্লেষকরা। কারণ, কোনো প্রমাণ না দেখিয়ে কেবল বক্তব্যে ভরসা করা রাজনৈতিক কৌশল হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমস ইউরোপীয় গোয়েন্দা সংস্থার বরাত দিয়ে জানায়, ইরানের ইউরেনিয়ামের মজুত কেবল ফোর্দোতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। অর্থাৎ, হামলার সময় অনেক অংশ হয়তো অন্যত্র সরিয়ে রাখা হয়েছিল—যা ইসরায়েল বা আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থার নজরের বাইরেই ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, গোয়েন্দা প্রধান র্যাটক্লিফ এবং জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল ড্যান কেইন এই হামলার বিস্তারিত তথ্য নিয়ে একটি গোপন ব্রিফিং দেন সিনেট সদস্যদের।
এই ব্রিফিংয়ে বলা হয়, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে "তীব্র ধাক্কা" দেয়া হয়েছে। তবে বাস্তবচিত্র যেটাই হোক না কেন, হেগসেথ স্পষ্ট করে বলেন, "সাংবাদিকেরা আমাদের সফলতাকে খাটো করে দেখাচ্ছেন। বাস্তবতা হলো—আমরা দারুণভাবে সফল হয়েছি।"
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি এক তীব্র হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেন, “যদি যুক্তরাষ্ট্র আবার আক্রমণ চালায়, তাহলে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে থাকা মার্কিন ঘাঁটিগুলো ইরানের পাল্টা হামলার টার্গেট হবে।”
এই বক্তব্য পরমাণু যুদ্ধের শঙ্কাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মধ্যপ্রাচ্যে একটি ভুল বোঝাবুঝিই ভয়াবহ যুদ্ধের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তারা ইরানের পারমাণবিক শক্তিকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। ইরান বলছে, তারা প্রস্তুত প্রতিরোধে। আর গোয়েন্দা ছবিতে দেখা যাচ্ছে—হয়তো ইরান আগেই ইউরেনিয়াম সরিয়ে ফেলেছে।
যদি সত্যিই তাই হয়ে থাকে, তাহলে প্রশ্ন রয়ে যায়—এত বড় অভিযান, এত ব্যয়বহুল বোমাবর্ষণ, এত উচ্চস্বরে ঘোষণা—সবকিছু কি শুধুই রাজনৈতিক নাটক? নাকি এর পেছনে লুকিয়ে রয়েছে আরও বড় কোনো পরিকল্পনা?
 'আই নিউজ বিডি' অ্যাপ
  'আই নিউজ বিডি' অ্যাপ
  
  
 
		 
				 
			



















 
					     
			 
						 
			 
			 
			 
			 
			 
			