close
কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!
ইতিহাসের সবচেয়ে বিধ্বংসী ভূমিকম্প: এক প্রলয়েই লুকিয়ে ৮ লক্ষের বেশি মৃত্যুর করুণ কাহিনি


ভূমিকম্প, প্রকৃতির এক অপ্রতিরোধ্য শক্তি, মাঝে মাঝে এমন ধ্বংসযজ্ঞ নিয়ে আসে যার ক্ষত পৃথিবীর বুকে অমোচনীয় হয়ে থেকে যায়। ইতিহাসে এমনই এক ভয়ংকর দিন ছিল ১৫৫৬ সালের ২৩ জানুয়ারি। চীনের শানসি প্রদেশে ঘটে যাওয়া এই ভূমিকম্পে প্রাণ হারান প্রায় ৮ লক্ষ ৩০ হাজার মানুষ, যা একে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্প হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
প্রলয়ের সূচনা
শীতের এক ভোরে, স্থানীয় সময় অনুযায়ী ঠিক ভোরে, শানসি প্রদেশ কেঁপে উঠেছিল এক ভয়ংকর ভূমিকম্পে। আধুনিক রিখটার স্কেলের মাপ অনুযায়ী কম্পনের মাত্রা ছিল ৮ থেকে ৮.৩। ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়েছিল ওয়েই নদীর উপত্যকায়। মাটি ফেটে সৃষ্টি হয়েছিল বিশাল ফাটল। সেই ফাটল থেকে উঠে আসা পানিতে সৃষ্ট হয় বন্যা।
মৃত্যুর কারণ: প্রকৃতির নিষ্ঠুর খেলা
সেই সময় শানসি ছিল একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। বাসিন্দাদের বেশিরভাগই বসবাস করতেন পাহাড়ের গায়ে খোদাই করা প্রাকৃতিক গুহাগুলোতে, যেগুলো স্থানীয়ভাবে পরিচিত ছিল ‘ইয়াওডং’ নামে। ভূমিকম্পের প্রবল কম্পনে তাসের ঘরের মতো ধসে পড়ে গুহাগুলো। প্রবল পাথর চাপা পড়ে ঘুমন্ত অবস্থায় মারা যান লক্ষ লক্ষ মানুষ।
অপ্রতিরোধ্য ধ্বংসযজ্ঞ
শানসি শহরের পরিকাঠামো পুরোপুরি ধসে পড়ে। পাহাড় মাটিতে মিশে যায়, আর সমতল ভূমি ভাঁজ হয়ে ছোট ছোট পাহাড়ের জন্ম দেয়। মাটির নিচ থেকে উঠে আসা পানিতে প্লাবিত হয় গোটা এলাকা। এই ভূমিকম্পের পরবর্তী পরাঘাত (আফটার শক) আরও একদিন ধরে চলেছিল, যা ভূমিধসের সৃষ্টি করে পুরো জনপদ নিশ্চিহ্ন করে দেয়।
দীর্ঘমেয়াদি বিপর্যয়
ভূমিকম্পের তাত্ক্ষণিক ধ্বংসযজ্ঞের পাশাপাশি, দীর্ঘমেয়াদি বিপদও ডেকে আনে। ফসল নষ্ট হয়ে দেখা দেয় দুর্ভিক্ষ। রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ে। নদীগুলোর জল বেড়ে প্লাবিত করে আশপাশের অঞ্চল। সামাজিক বিশৃঙ্খলা বৃদ্ধি পায়, আর সেই সময়ের সমাজ গভীর সংকটে পতিত হয়।
শানসি ভূমিকম্প: এক শিক্ষণীয় অধ্যায়
এই ঘটনার ভয়াবহতা চীনের মানুষকে শিখিয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার গুরুত্ব। এরপর থেকে গুহাবাস ত্যাগ করে হালকা কাঠ এবং বাঁশের তৈরি বাড়ি তৈরিতে মনোনিবেশ করেন মানুষ।
অতীতের বার্তা বর্তমানের জন্য
বিশ্বের ইতিহাসে আরও অনেক বড় ভূমিকম্পের কথা জানা গেলেও, এত বিপুল সংখ্যক মানুষের মৃত্যু আর কখনও হয়নি। আজকের জনসংখ্যার তুলনায় ১৫৫৬ সালের সেই মৃত্যু সংখ্যা অনুপাতিকভাবে আরও ভয়ংকর। প্রকৃতির এই নিষ্ঠুর শক্তি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, প্রযুক্তি আর উন্নতির যতই অগ্রগতি হোক না কেন, প্রকৃতির সামনে আমরা কতটা অসহায়।
এই ভয়াবহ ট্র্যাজেডি চিরকাল মনে করিয়ে দেবে মানবজাতিকে, প্রকৃতির শক্তির সামনে আরও বেশি প্রস্তুত থাকার প্রয়োজনীয়তা।
Hiçbir yorum bulunamadı