close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

ইসরায়েলি গণহত্যার অর্থনীতি থেকে লাভবান হচ্ছে কারা

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ইসরায়েলি দমন-পীড়ন ও যুদ্ধনীতি থেকে লাভবান হচ্ছে বিশ্বজুড়ে ৬০টির বেশি বিখ্যাত কোম্পানি, বলছে জাতিসংঘ। গুগল-মাইক্রোসফটসহ টেক জায়ান্টরা ফিলিস্তিনের উপর নিপীড়নের প্রযুক্তি দিচ্ছে বলে অভিযোগ।..

ইসরায়েলের দখলদার নীতি, সামরিক আগ্রাসন ও বর্ণবাদী শাসনের বিরুদ্ধে এবার মুখ খুলেছে জাতিসংঘ। সম্প্রতি জাতিসংঘে উপস্থাপিত এক বিস্ফোরক রিপোর্টে ফাঁস হয়েছে—বিশ্বজুড়ে প্রভাবশালী কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো কিভাবে ইসরায়েলের ফিলিস্তিন দমননীতিতে অর্থ, প্রযুক্তি ও অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করছে এবং সে মাধ্যমেই লাভবান হচ্ছে। ২৪ পৃষ্ঠার এই শক্তিশালী রিপোর্টে নাম উঠে এসেছে গুগল, অ্যামাজন, মাইক্রোসফট, লকহিড মার্টিন, এলবিট সিস্টেমস, ক্যাটারপিলার, প্যালান্টির, এইচডি হুন্ডাইয়ের মতো ৬০টির বেশি প্রতিষ্ঠানের।

জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের বিশেষ দূত ফ্রানচেস্কা আলবানিজে এই প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন। তিনি জানান, এই প্রতিষ্ঠানগুলো ইসরায়েলের ‘গণহত্যার অর্থনীতিতে’ পরিণত হওয়া প্রক্রিয়াকে সমর্থন করেছে। তাদের কার্যকলাপ শুধু ইসরায়েলের দখলদার নীতি নয়, বরং ফিলিস্তিনিদের ওপর চালানো মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, দখলকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চল এখন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর জন্য ‘পরীক্ষাগার’-এ পরিণত হয়েছে। যেখানে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ইসরায়েলি বাহিনী ফিলিস্তিনিদের উপর নিপীড়ন চালাচ্ছে। মাইক্রোসফট ও গুগল-অ্যামাজনের ক্লাউড অবকাঠামো ব্যবহার করে ইসরায়েল "Project Nimbus" নামে যে এআই প্রকল্প চালু করেছে, তা ২০২৩ সালের গাজা যুদ্ধের সময় ভয়াবহভাবে ব্যবহৃত হয়। যুদ্ধক্ষেত্রে লক্ষ্য নির্ধারণ এবং বোমা হামলা পরিচালনায় এই সিস্টেম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

প্যালান্টির টেকনোলজিস ইনকর্পোরেটেড ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে রিয়েল-টাইম যুদ্ধ বিশ্লেষণ প্রযুক্তি দিচ্ছে বলে জানানো হয় প্রতিবেদনে। এটি ইসরায়েলের সামরিক কার্যক্রমকে আরও কার্যকর এবং ভয়ঙ্কর করে তুলেছে।

প্রতিবেদন বলছে, মার্কিন অস্ত্র নির্মাতা লকহিড মার্টিন, এলবিট সিস্টেমস এর মতো সংস্থাগুলো ইসরায়েলকে ক্ষেপণাস্ত্র ও যুদ্ধ সরঞ্জাম সরবরাহ করে যাচ্ছে। অন্যদিকে, ক্যাটারপিলারএইচডি হুন্ডাই সরবরাহ করা নির্মাণ যন্ত্রপাতি বেআইনি ইসরায়েলি বসতি নির্মাণে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই বসতিগুলোর জন্য ফিলিস্তিনিদের নিজ ভূমি থেকে উৎখাত করা হচ্ছে। এই নির্মাণ কার্যক্রম আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে বলেও উল্লেখ করা হয়।

জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী, গাজা যুদ্ধ শুরুর পর ইসরায়েলি তেলআবিব স্টক এক্সচেঞ্জ-এ কোম্পানিগুলোর বাজারমূল্য ১৭৯% বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে প্রায় ১৫৭.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার নতুন মুনাফা তৈরি হয়েছে। অর্থাৎ, যুদ্ধ যতই ভয়াবহ হয়েছে, ততই লাভের পাহাড়ে উঠেছে এই কোম্পানিগুলো।

রিপোর্টে বলা হয়, যেসব কোম্পানির নাম এসেছে তাদের মধ্যে ৪৮টি প্রতিষ্ঠানকে সরাসরি জানানো হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১৫টি প্রতিষ্ঠান সাড়া দিলেও তাদের প্রতিক্রিয়া জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি। লকহিড মার্টিন তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে জানিয়েছে—তাদের অস্ত্র বিক্রি সরকার থেকে সরকার লেনদেনের মাধ্যমে হয়ে থাকে, ফলে তারা নয় বরং যুক্তরাষ্ট্র সরকারই এসব প্রশ্নের সঠিক উত্তরদাতা।

ফ্রানচেস্কা আলবানিজে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, ইসরায়েলের ওপর পূর্ণাঙ্গ অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে। সেইসাথে, এই মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত ব্যক্তি ও কোম্পানির ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, এই কোম্পানিগুলোর নির্বাহীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে তদন্ত ও বিচারের আওতায় আনা উচিত, কারণ তারা আন্তর্জাতিক অপরাধে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেছে এবং সেগুলো থেকে অর্জিত আয়ের মানি লন্ডারিং-এ জড়িত।

এই রিপোর্ট শুধু ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকট নয়, বরং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও কর্পোরেট দুনিয়ায় নৈতিকতার ভূমিকা নিয়েও বড় প্রশ্ন তোলে। বিশ্বে যদি মুনাফার জন্য যুদ্ধ ও দখলদারিত্বকে বৈধতা দেওয়া হয়, তাহলে ভবিষ্যতে মানবাধিকার রক্ষার লড়াই কঠিন থেকে কঠিনতর হবে।

জাতিসংঘের এই প্রতিবেদন তাই কেবল একটি রিপোর্ট নয়, এটি এক ভয়ংকর বাস্তবতার আয়না। এই আয়নায় আজকের বিশ্ব ব্যবস্থার নগ্ন চেহারা ধরা পড়েছে—যেখানে প্রযুক্তি, যুদ্ধ এবং মুনাফা একে অপরের হাত ধরে চলছে, আর মানবতা সেখানে ধুঁকছে।

Inga kommentarer hittades