মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইসরায়েলে পৌঁছেছেন। বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে নেমেই তিনি মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে আলোচনায় অংশ নেবেন। তার সফর ঘিরে বিশ্বজুড়ে কূটনৈতিক উত্তেজনা ও আশার মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আজ ইসরায়েলে পৌঁছেছেন, যা মধ্যপ্রাচ্যের চলমান যুদ্ধবিরতি প্রক্রিয়ায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। লাইভ সম্প্রচারে দেখা গেছে, প্রেসিডেন্টের বিশেষ বিমান এয়ার ফোর্স ওয়ান বেন গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করছে। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হার্জোগ।
ট্রাম্পের সঙ্গে রয়েছেন তার জামাতা জ্যারেড কুশনার, মেয়ে ইভাঙ্কা ট্রাম্প এবং মার্কিন মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ। তার সফরের মূল উদ্দেশ্য ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে চলমান সংঘাত প্রশমিত করা এবং যুদ্ধবিরতির একটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি প্রণয়ন করা।
হোয়াইট হাউসের সূত্রে জানা যায়, ট্রাম্প আজ ইসরায়েলি পার্লামেন্ট নেসেট-এ ভাষণ দেবেন, যেখানে তিনি শান্তি প্রতিষ্ঠা, নিরাপত্তা এবং দুই রাষ্ট্র সমাধানের বিষয়ে মতামত তুলে ধরবেন। পরে তিনি মিসরে গিয়ে যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে একটি শীর্ষ সম্মেলনে সহসভাপতিত্ব করবেন।
ইসরায়েল সফরের দিনই গাজা উপত্যকা থেকে উল্লেখযোগ্য একটি মানবিক উদ্যোগের খবর আসে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস সাতজন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে। সোমবার সকাল ৮টার পর আন্তর্জাতিক রেড ক্রসের হাতে এই জিম্মিদের হস্তান্তর করা হয়। রেড ক্রসের মাধ্যমে তাদের বর্তমানে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর কাছে পাঠানো হয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর একটি এক্স পোস্টে জানানো হয়, হামাস যাদের মুক্তি দিয়েছে তারা হলেন— ইতান মোর, গালি বারম্যান, জিভ বারম্যান, মাতান অ্যাগ্রেস্ট, ওমরি মিরান, আলন এহল এবং গাই গিলবোয়া দালাল।
এই বন্দিমুক্তির প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল ঘোষণা করেছে, তারা দুই হাজার ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে। মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে ২৫০ জন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত। তবে ফিলিস্তিনের জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা মারওয়ান বারঘৌতি এই তালিকায় নেই।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই সফর মধ্যপ্রাচ্যের কূটনৈতিক ভারসাম্যে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। একদিকে যুক্তরাষ্ট্র নতুন শান্তিচুক্তির মাধ্যমে ইসরায়েল ও আরব দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করতে চায়, অন্যদিকে ফিলিস্তিনি নেতৃত্ব এই পদক্ষেপকে সন্দেহের চোখে দেখছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের মতে, ট্রাম্পের সফর ঘিরে তেলআবিব ও জেরুজালেমে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পুরো শহরে প্রায় ১০,০০০ পুলিশ ও সামরিক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বিমানবন্দর থেকে নেসেট পর্যন্ত প্রেসিডেন্টের কনভয় নিরাপত্তার বিশেষ চৌকস বাহিনীর তত্ত্বাবধানে চলাচল করবে।
এদিকে মিসরের কায়রোতে ইতোমধ্যে পৌঁছেছেন বিভিন্ন আরব দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা, যেখানে আগামীকাল থেকে শুরু হবে যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত শীর্ষ বৈঠক। ট্রাম্প সেখানে উপস্থিত থেকে মধ্যস্থতা করার কথা রয়েছে।
বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সফর শুধু যুদ্ধবিরতি নয়, বরং ২০২5 সালের মার্কিন নির্বাচনের আগেই ট্রাম্পের কূটনৈতিক অবস্থান পুনর্গঠনের একটি প্রচেষ্টা হতে পারে।
সূত্র: আলজাজিরা