গাজার উত্তরের জাবালিয়া শরণার্থী শিবির রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। দখলদার ইসরাইলি বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে এখানে অভিযান চালালেও ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ বাহিনী, বিশেষ করে হামাস এবং ইসলামী জিহাদ, তাদের শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। সাম্প্রতিক সংঘর্ষে অন্তত ৩৫ জন ইসরাইলি সেনা নিহত এবং শতাধিক সেনা আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরাইলি গণমাধ্যম।
সংঘর্ষের তীব্রতা বেড়েই চলেছে
ইসরাইলি গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, জাবালিয়া শরণার্থী শিবির এবং এর আশেপাশের এলাকাগুলোতে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ বাহিনীর সঙ্গে ইসরাইলি সেনাদের তীব্র সংঘর্ষ হয়েছে। ইসরাইলি বাহিনী নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করার চেষ্টা চালালেও ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা বীরত্বের সঙ্গে তাদের মোকাবিলা করছে।
এছাড়া, ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, সংঘর্ষে জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের প্রায় ৭০ শতাংশ ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। দখলদার সেনারা শিবিরের বাসিন্দাদের পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত ৯৬,০০০ ফিলিস্তিনি নাগরিক তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে।
হামাসের প্রতিরোধের ইতিহাস
ইসরাইলি সেনাবাহিনী ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে অবরুদ্ধ গাজায় যে আগ্রাসন শুরু করেছে, তা হামাসের ঐতিহাসিক প্রতিরোধ অভিযানের প্রতিক্রিয়ায়। দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর বাড়তে থাকা অত্যাচার এবং নিপীড়নের জবাবে হামাস এই অভিযান পরিচালনা করে। সেই থেকেই গাজায় সংঘাত বাড়তে থাকে।
ইসরাইল গাজা উপত্যকায় সম্পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে এবং সেখানে একটি নির্মূল অভিযান শুরু করে। উপত্যকাটিতে ২০ লক্ষেরও বেশি ফিলিস্তিনি বাস করতেন, কিন্তু অবরোধের কারণে তাদের জন্য জ্বালানি, বিদ্যুৎ, খাদ্য এবং পানীয় জলের মতো মৌলিক প্রয়োজনীয়তাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ফিলিস্তিনিদের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি
গাজার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। গত ১৫ মাসের বেশি সময় ধরে চলা ইসরাইলি আগ্রাসনে এ পর্যন্ত মোট ৪৫,২৫৯ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী এবং শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন ১০৭,৬২৭ জন। এই মানবিক বিপর্যয় সারা বিশ্বকে স্তব্ধ করে দিয়েছে।
বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়া
গাজার এই সংঘর্ষ এবং মানবিক বিপর্যয় বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। অনেক দেশ এবং মানবাধিকার সংস্থা ইসরাইলি আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়েছে এবং গাজায় শান্তি স্থাপনের জন্য আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে।
গাজার জনগণের সাহসী প্রতিরোধ এবং এই সংঘর্ষে ইসরাইলি বাহিনীর বড় ক্ষয়ক্ষতি দখলদারদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা। তবে পরিস্থিতি শান্ত করতে অবিলম্বে একটি সমাধান প্রয়োজন, যাতে নিরীহ মানুষের প্রাণহানি বন্ধ হয় এবং মানবাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।
No comments found



















