ইসরাইলের হৃদয়ে কাঁপন ধরানো বাংলাদেশি যোদ্ধা: একাই নামিয়ে দিয়েছিলেন ৪টি যুদ্ধবিমান!..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ইসরাইলের বিরুদ্ধে একাই গর্জে উঠেছিলেন এক বাঙালি ক্যাপ্টেন। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে তার বীরত্বে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল মধ্যপ্রাচ্যের আকাশ! আজও তার কীর্তি ইতিহাসের পাতায় রক্তিম অক্ষরে লেখা। জানুন সেই কিংবদন্তি সা..

গাজায় আবারও আগুন, আবারও মৃত্যু

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরাইলের নৃশংস আগ্রাসনে নরকপুরীতে পরিণত হয় ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা। ১৫ মাসের লাগাতার হামলার পর মাত্র ৪২ দিনের অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির স্বস্তি ফিরেছিল নারী-শিশুসহ নিরীহ মানুষের মধ্যে। তবে সেই স্বস্তির নিশ্বাসটিও দীর্ঘস্থায়ী হতে দেয়নি দখলদার ইসরাইল।

২০২৫ সালের ১৮ মার্চ থেকে ফের শুরু হয় ব্যাপক বিমান ও স্থল অভিযান। মুহূর্তেই ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় ফিলিস্তিনিদের জীবন। খাদ্য সংকট, ওষুধের অভাব ও আশ্রয়হীনতা আজ গাজাবাসীর নিত্যসঙ্গী। ধ্বংসের স্তূপে পরিণত হওয়া এই ভূখণ্ডে প্রতিদিন বেড়েই চলেছে মৃত্যুর মিছিল।

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরাইলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৬২ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। আহত হয়েছেন দেড় লাখেরও বেশি মানুষ।


হামাসের পাল্টা প্রতিরোধ ও ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি

এই আগ্রাসনের জবাবে এখন পর্যন্ত সহস্রাধিক রকেট নিক্ষেপ করেছে স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। যদিও অধিকাংশ ক্ষেপণাস্ত্র ইসরাইলের আয়রন ডোম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় আটকানো হয়েছে, তবুও বিশ্বব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এখন আবার সেই পুরনো প্রশ্ন: “ইসরাইলকে আসলেই কীভাবে রুখে দেওয়া যায়?”

এই পরিস্থিতিতে অনেকেই স্মরণ করছেন এক বাঙালি যোদ্ধাকে, যিনি একাই আকাশ থেকে ভূপাতিত করেছিলেন চারটি ইসরাইলি যুদ্ধবিমান—তিনি ক্যাপ্টেন সাইফুল আজম।


বাঙালির বীরগাঁথা: সাইফুল আজম সুজার রক্তঝরা কাহিনী

১৯৬৭ সালের তৃতীয় আরব-ইসরাইল যুদ্ধে ইরাকি বিমানবাহিনীর হয়ে লড়েছিলেন বাংলাদেশের সন্তান সাইফুল আজম সুজা। যুদ্ধ শুরুর কয়েক দিনের মধ্যেই সিরিয়া, মিসর ও জর্ডান বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। তবে সেই সময়েই জর্ডানের মাফরাক বিমানঘাঁটিতে সাহসের প্রতীক হয়ে ওঠেন আজম।

চারটি সুপারসনিক ইসরাইলি যুদ্ধবিমান ঘাঁটির দিকে ধেয়ে এলে, তিনি হকার হান্টার নিয়ে আকাশে উড়াল দেন। মুহূর্তেই নামিয়ে দেন দুটি বিমান! একটি ধ্বংস হয়, অন্যটি গিয়ে পড়ে ইসরাইল সীমান্তে।

এরপর ইরাকের হয়ে ‘এইচ-থ্রি’ ঘাঁটি রক্ষায় অংশ নেন তিনি। সেখানেও আরেকটি ‘মিরাজ থ্রিসি’ বিমান ভূপাতিত করেন। এতে বন্দি হয় ইসরাইলি ক্যাপ্টেন গিডিওন দ্রোর, যার বিনিময়ে পরে মুক্তি পায় শতাধিক আরব সেনা।

এই অনন্য বীরত্বের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে প্রদান করা হয় ‘নাত আল-সুজাহ’, ‘হুসাম-ই-ইস্তিকলাল’-সহ একাধিক সামরিক পদক।


বিশ্বের ইতিহাসে একমাত্র বৈমানিক

সাইফুল আজম বিশ্বের একমাত্র বৈমানিক যিনি চারটি দেশের (পাকিস্তান, জর্ডান, ইরাক, বাংলাদেশ) হয়ে বিমান চালিয়েছেন। তিনি ৮টি দেশের যুদ্ধবিমান পরিচালনা করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীনসহ আরও।

২০০১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এয়ার ফোর্স তাকে বিশ্বের ২২ জন ‘লিভিং ইগলস’-এর একজন হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।


গর্বিত বাংলাদেশ, বিস্মৃত প্রজন্ম

এই কিংবদন্তি বীর ছিলেন পাবনা-৩ আসনের সাবেক এমপি এবং বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল ফখরুল আজমের ভাই। ২০২০ সালের জুনে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

আজ যখন গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত, তখন আবারও মনে পড়ে—যদি আরও কিছু সাইফুল আজম থাকতেন! তার মতো সাহসী এয়ার স্ট্রাইকার আর সম্মিলিত মুসলিম বিশ্বের প্রতিরোধই পারে ইসরাইলি বর্বরতাকে থামাতে।


শেষ কথা:

সাইফুল আজম শুধু একজন যুদ্ধবিমান চালক ছিলেন না, তিনি ইতিহাসে লেখা এক জীবন্ত কিংবদন্তি। আজ যখন ফিলিস্তিন রক্তাক্ত, তখন প্রয়োজন এমন আরও সাইফুল আজমের, যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারেন বুক চিতিয়ে।

Комментариев нет


News Card Generator