মধ্যপ্রাচ্য আবারো জ্বলছে। রক্তমাখা প্রতিশোধের পথে হাঁটছে ইরান। ইসরায়েলের সামরিক শক্তির হৃদয়ে পরপর আঘাত হানছে ইরানের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক বাহিনী — ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (IRGC)।
সাম্প্রতিক এক অফিসিয়াল বিবৃতিতে আইআরজিসি সাফ জানিয়ে দিয়েছে, তাদের সাম্প্রতিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন আক্রমণগুলো পরিকল্পিত, বহুস্তরবিশিষ্ট এবং সুসংহত প্রতিশোধের অংশ। লক্ষ্যবস্তু হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে সেই বিমানঘাঁটিগুলো, যেগুলো ব্যবহার করে ইসরায়েল গত সপ্তাহে ইরানের ভূখণ্ডে হামলা চালিয়েছিল।
আমাদের হামলা শুধু শুরু হয়েছে। এটি একবারে থামবে না। ধাপে ধাপে, স্তরে স্তরে এই প্রতিশোধ চলবে যতক্ষণ না আমরা সঠিক জবাব পৌঁছে দিতে পারি।
বিশ্ব রাজনীতির নজর এখন টেল আভিভ ও তেহরানের দিকে। আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহল আশঙ্কা করছে, এই সংঘাত যদি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের রূপ নেয়, তাহলে শুধু ইসরায়েল-ইরান নয়—সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য, এমনকি গোটা বিশ্ব এর প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে পারবে না।
ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আইআরএনএ নিশ্চিত করেছে, মঙ্গলবার থেকে তারা ইসরায়েলের উপর দশম ধাপের সামরিক আঘাত শুরু করেছে। এ পর্যায়ের আক্রমণে সর্বাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি হামলায় ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটিতে বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে দাবি করেছে ইরান।
তবে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এখনো এই হামলার ব্যাপারে নিরব ভূমিকা পালন করছে। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক অবস্থানের কথা বিবেচনা করেই হয়তো তারা এখনই আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিচ্ছে না।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের এই কৌশলগত হামলা শুধু প্রতিশোধ নয়—বরং একটি বার্তা। যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও পশ্চিমা সামরিক জোটগুলোকে সরাসরি বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে, ইরান কেবল কথার খেলাপ নয়—কার্যকর শক্তি হিসেবেই নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
বিশ্বের অনেক পর্যবেক্ষকই বলছেন, এই উত্তেজনা আগামী দিনে দুই দেশের মধ্যে সরাসরি যুদ্ধের দিকে নিয়ে যেতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে সৌদি আরব, তুরস্ক, কাতারসহ আশপাশের মুসলিম রাষ্ট্রগুলো কী অবস্থান নেয় সেটাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
ইতিমধ্যে ২১টি মুসলিম দেশ ইসরায়েলের এই আগ্রাসী আচরণের প্রতিবাদে বিবৃতি দিয়েছে। ইরান বলেছে, এই লড়াই শুধু ইরানের না, বরং মুসলিম বিশ্বের সম্মানের লড়াই।
এই মুহূর্তে পুরো বিশ্বজুড়ে চোখ রাখা হচ্ছে এক বিন্দুতে—ইরান-ইসরায়েল ফ্রন্টলাইনে। এটি নিছক দ্বন্দ্ব নয়, এটি ইতিহাসের আরেকটি রক্তমাখা অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে।



















