ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে বন্দি বিনিময় শুরু হচ্ছে

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
গাজায় আটক ২০ ইসরাইলি বন্দির বিনিময়ে ২০০০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিতে সোমবার চুক্তি শুরু। একই দিনে মিশরে অনুষ্ঠিত হবে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলন।..

ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের মধ্যে এক ঐতিহাসিক বন্দি বিনিময় চুক্তি কার্যকর হতে চলেছে। সোমবার থেকে এই বিনিময় প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানানো হয়েছে। একই দিনে গাজার যুদ্ধের ইতি টানতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার জন্য একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন মিশরে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে, যা মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সংকটে কূটনৈতিক তৎপরতার এক নতুন মোড় উন্মোচন করেছে।

সূত্রের খবর অনুযায়ী, এই চুক্তির আওতায় আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে গাজায় আটক প্রায় ২০ জন ইসরাইলি বন্দির বিনিময়ে ইসরাইলের কারাগারে বন্দি থাকা প্রায় ২০০০ ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হবে। এই বিশাল সংখ্যক বন্দি বিনিময় দুই পক্ষের মধ্যে তীব্র সংঘাতের পরও আস্থা স্থাপনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করে।

যুদ্ধবিরতির পথ তৈরি করতে এই কূটনৈতিক পদক্ষেপ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। গাজা যুদ্ধের অবসান এবং মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।

সম্মেলনটি মিশরের বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র শার্ম আল শেখে অনুষ্ঠিত হবে। এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে যৌথভাবে সভাপতিত্ব করবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং মিশরের প্রেসিডেন্ট আব্দুল ফাত্তাহ আল সিসি। মিশর প্রেসিডেন্টের কার্যালয় এক বিবৃতিতে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

মিশরীয় প্রেসিডেন্টের কার্যালয় কর্তৃক প্রকাশিত বিবৃতিতে সম্মেলনের লক্ষ্য সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এর মূল লক্ষ্য হলো গাজা যুদ্ধের অবসান ঘটানো, মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা জোরদার করা এবং একই সাথে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার একটি নতুন যুগের সূচনা করা।

এই উচ্চপর্যায়ের শান্তি প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে বিশ্বের ২০টিরও বেশি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা উপস্থিত থাকবেন বলে জানানো হয়েছে। এটি প্রমাণ করে যে, গাজার সংঘাত এখন কেবল আঞ্চলিক নয়, বরং একটি বৈশ্বিক উদ্বেগের বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

সম্মেলনে ইতোমধ্যে যেসব গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক নেতার উপস্থিতি নিশ্চিত হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অন্থনিও গুতেরেস, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেস এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। বিশ্ব নেতারা সরাসরি উপস্থিত থেকে আলোচনার গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে তুলেছেন।

তবে, এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ অনিশ্চয়তা বিদ্যমান। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু অথবা ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন কিনা, তা এখনো পর্যন্ত পরিষ্কার নয়। সংঘাতের দুই প্রধান পক্ষের উপস্থিতি অনিশ্চিত থাকা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক সমাজের পক্ষ থেকে শান্তি প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়েছে।

বন্দি বিনিময়ের এই চুক্তিটি নিঃসন্দেহে মানবিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে উভয় পক্ষের পরিবারের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসার সুযোগ সৃষ্টি হবে। একই সাথে, এত বিপুল সংখ্যক ফিলিস্তিনি বন্দীর মুক্তি হামাসের পক্ষ থেকে একটি বড় রাজনৈতিক বিজয় হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

শার্ম আল শেখের সম্মেলনটি এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য একটি শক্তিশালী আন্তর্জাতিক ঐকমত্য তৈরি হচ্ছে। এই সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো কেবল গাজা নয়, বরং সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যতের গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক শক্তির সমন্বয় এবং আন্তর্জাতিক চাপের মুখে এই বন্দি বিনিময় চুক্তি এবং শান্তি সম্মেলন দুটিই যুদ্ধ সমাপ্তির দিকে একটি প্রাথমিক, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

Nessun commento trovato


News Card Generator